ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। মামলার প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে শুটার ফয়সালের বাবা–মা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হামলার পরিকল্পনা, অস্ত্র গোপন এবং পলায়নে সহায়তার বিষয়ে বিস্ময়কর ও স্বীকারোক্তিমূলক তথ্য তুলে ধরেছেন।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলামের আদালতে জবানবন্দি দেন ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির (৭০) ও মা হাসি বেগম (৬০)। আদালতে দেওয়া তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে, ফয়সালের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তারা আগে থেকেই অবগত ছিলেন এবং হাদির ওপর হামলার পর ছেলেকে আত্মগোপনে যেতে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জবানবন্দিতে ফয়সালের বাবা–মা জানান, হামলাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। ঘটনার আগের রাতেই ফয়সাল পরদিন শরীফ ওসমান বিন হাদির কর্মসূচি সম্পর্কে জানত। ধরা পড়ার ঝুঁকি এড়াতে হামলার দিন সে কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেনি। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি পরিকল্পিত অপরাধের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত, যা মামলার তদন্তে নতুন প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
জবানবন্দি অনুযায়ী, হাদিকে গুলি করার পর ফয়সাল রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় তার বোনের বাসায় আশ্রয় নেয়। সেখানে গিয়ে সে ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত মিলিয়ে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র তার বাবার কাছে হস্তান্তর করে। পরে পালানোর সুবিধার্থে মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট পরিবর্তন করা হয়, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহজে তাকে শনাক্ত করতে না পারে।
আদালতে দেওয়া বক্তব্যে ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির স্বীকার করেন, তিনি নিজেই ছেলের জন্য একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার ব্যবস্থা করে দেন। শুধু তাই নয়, ফয়সালকে দেশ ছাড়তে সহায়তার পরিকল্পনাও করা হয়েছিল বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়।
জবানবন্দিতে ফয়সালের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কেও একাধিক তথ্য উঠে এসেছে। তার বাবা–মা জানান, ফয়সাল তিনটি বিয়ে করেছে এবং তার একাধিক ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। শিক্ষাজীবনে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকেই সে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের একাধিক উচ্চপর্যায়ের নেতার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়।
ফয়সালের বাবা–মা আরও স্বীকার করেন, ছেলের মাদকাসক্তি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তারা আগে থেকেই জানতেন। তবে পারিবারিক সম্পর্ক খুব একটা ঘনিষ্ঠ ছিল না—এমন দাবি করে তারা বলেন, একাধিকবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও তিনি অপরাধের পথ থেকে সরে আসেননি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাবা–মায়ের এই জবানবন্দি মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনতে পারে। হামলার পেছনের নেটওয়ার্ক, অস্ত্রের উৎস এবং পলায়নের সহযোগীদের শনাক্ত করতে এই তথ্যগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শরীফ ওসমান বিন হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন এবং তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। এই ঘটনার পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
Leave a comment