সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের পাঁচটি গ্রাম বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে অন্ধকারে নিমজ্জিত। হাওরগামী তিনতলা বিশিষ্ট একটি হাউসবোটের অসাবধানতায় নদীতে থাকা পল্লী বিদ্যুতের ১১ হাজার ভোল্টের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় এই বিপর্যয় ঘটে। দুর্ঘটনার পরপরই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় ছিলানী তাহিরপুর, জয়পুর, গোলাবাড়ি, ইসলামপুর নতুন হাঁটি ও জয়পুর নতুন বাড়ি গ্রামে।
বিকেলে পাটলাই নদীর উপর দিয়ে চলাচলকারী ‘নীল কমল’ নামের একটি নতুন হাউসবোট অসচেতনভাবে চালানোর সময় মেইন লাইনের বৈদ্যুতিক তারে ধাক্কা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তার ছিঁড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময় তারে আগুনের ফুলকি দেখা যায় এবং মুহূর্তের মধ্যে দুটো বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে। এর ফলে পুরো অঞ্চল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর ক্ষোভ থাকলেও বোটটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তবে বোটে থাকা দুইজনকে আটক রেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘটনার পরপরই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সাফাকুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জানানো হলে তাদের টেকনিক্যাল টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা জানায়, বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষয়ক্ষতি এতটাই গুরুতর যে তা মেরামতে সময় লাগবে। আপাতত একটি গ্রামে সাময়িকভাবে বিকল্প লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করার চেষ্টা চলছে।
নীল কমল হাউসবোটের ব্যবস্থাপক আল মামুন কালবেলাকে জানান, বোটটি আজই প্রথমবারের মতো হাওরে চালু করা হয়েছে। অভিজ্ঞ সারং থাকা সত্ত্বেও তিনি বিদ্যুৎ লাইনের উচ্চতা বিবেচনা না করেই চালনা করেন, ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। বোটটি এখন নিলাদ্রী লেকে চলে গেছে, তবে ব্যবস্থাপকসহ সংশ্লিষ্টরা এখনো ঘটনাস্থলেই রয়েছেন।
তাহিরপুর সাব জোনাল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী ম্যানেজার আলাউল হক সরকার বলেন, “হাউসবোটের ধাক্কায় ১১ হাজার ভোল্টের লাইন ছিঁড়ে গেছে। আমাদের টিম ঘটনাস্থলে কাজ করছে। তবে লাইনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পুরোপুরি বিদ্যুৎ পুনঃস্থাপনে কিছুটা সময় লাগবে।”
টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসলেও নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত ঘাটতির কারণে এমন দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা বোট পরিচালনায় নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় এমন দুর্ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
Leave a comment