হংকংয়ে গত আট দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯৪ -এ দাঁড়িয়েছে বুধবার বিকেলে উত্তরাঞ্চলের তাই পো জেলায় অবস্থিত বিশাল আবাসিক কমপ্লেক্স ওয়াং ফুক কোর্টে ভয়াবহ এ আগুন লাগে । আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় মুহূর্তেই আটটি টাওয়ারজুড়ে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়। কয়েক দিন পেরোলেও এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও শঙ্কাজনক করে তুলেছে।
শুক্রবার সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে মৃতের হালনাগাদ সংখ্যা প্রকাশ করে। ১৯৪৮ সালের ভয়াবহ গুদাম অগ্নিকাণ্ডের পর এটি হংকংয়ের সবচেয়ে প্রাণঘাতী অগ্নিদুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত হলো। শুক্রবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উদ্ধারকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছালেও এখনো কমপক্ষে ২৫টি জরুরি সহায়তার কল অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে।
ওয়াং ফুক কোর্টের ভবনগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ চলছিল। পুরো কমপ্লেক্সটি বাঁশের মাচা ও সবুজ জালে আবৃত ছিল। আগুন লাগার পর মুহূর্তেই ওই বাঁশের কাঠামো ভেঙে পড়ে এবং আগুন আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।দমকল বাহিনীর ডেপুটি ডিরেক্টর ডেরেক চ্যান জানান, ঘন ধোঁয়া, উচ্চতাপমাত্রা এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর কারণে প্রতিটি ইউনিটে পৌঁছানো ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি বলেন,“আমরা সাতটি ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটে প্রবেশ করছি, নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে ভিতরে কেউ আটকে আছে কি না । আজকের মধ্যেই পুরো অনুসন্ধান সমাপ্ত করার চেষ্টা চলছে।”
প্রায় ৪ হাজার ৬০০ মানুষের বসবাস ছিল এই আবাসিক চত্বরে। অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনে থাকা শত শত মানুষ ধোঁয়া, তাপ ও ভেঙে পড়া মাচায় আটকা পড়ে যায়। দমকলকর্মীদের অক্লান্ত চেষ্টা সত্ত্বেও এই বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ও দ্রুত বিস্তারের কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ ইতোমধ্যে এক নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে। তারা এমন দাহ্য ফোম বোর্ড ব্যবহার করেছিলেন, যা জানালার পথ আটকে দেয় এবং আগুন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়।
পুলিশ প্রতিষ্ঠানটির অফিস থেকে নথিপত্র, কম্পিউটার ও মোবাইল জব্দ করেছে। প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে, কমমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘনই বিপর্যয়কে আরও মারাত্মক করে তুলেছে।অগ্নিকাণ্ডের পরপরই নিখোঁজের সংখ্যা ২৭৯-এ পৌঁছায়। যদিও হালনাগাদ হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংখ্যা প্রকাশ হয়নি । আশপাশে স্থাপিত আশ্রয়কেন্দারগুলোতে নিখোঁজদের পরিবার ব্যাকুলভাবে প্রিয়জনদের খুঁজে ফিরছেন।
বৃহস্পতিবার এক মা তাঁর মেয়ের গ্র্যাজুয়েশনের ছবি হাতে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান—তাঁর মেয়ে ও স্বামীর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য প্রায় প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রেই দেখা যাচ্ছে।
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি ঘোষণা দিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য ৩০০ মিলিয়ন হংকং ডলার সমপরিমাণ বিশেষ তহবিল গঠন করা হবে। পাশাপাশি চীনের কয়েকটি বড় কোম্পানি স্বেচ্ছায় আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের পর নিকটবর্তী একটি শপিং মলে শতাধিক মানুষ অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার, পানি, পোশাক ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিতরণ করছেন।
নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করছেন, বড় আবাসিক কমপ্লেক্সে সংস্কার কাজের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আরও কঠোর বিধান প্রয়োজন ছিল। অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং বাহিরে বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়াই মৃত্যুহারের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের মত, এই অগ্নিকাণ্ড শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়—এটি একটি সতর্কবার্তা, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় রোধে নীতিনির্ধারকদের আরও কঠোর নিরাপত্তা মানতে বাধ্য করবে।
Leave a comment