সরকারের চলমান সংস্কারের নামে সময় ক্ষেপণের মধ্য দিয়ে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগে সহায়তা করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এসব পদক্ষেপের পেছনে সরকারের কৌশল থাকতে পারে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ভেঙে পুনর্বাসনের পথ সুগম করা।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। তারেক রহমানের বক্তব্যে উঠে আসে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এবং বিরোধী রাজনীতির ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টির অভিযোগ।
তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ এবং দীর্ঘদিন গুম থাকা বিএনপি নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, “২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সুমন গুম হওয়ার পর আজও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। অথচ গতকাল সুমনের বোনের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। প্রশাসনের দাবি, তারা নাকি জানত না সুমন কে। এর মধ্যে আবার পলাতক স্বৈরাচার সরকারের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি দেশে প্রবেশ কিংবা দেশত্যাগ করেন, অথচ সরকারের নাকি কিছুই জানা নেই। তাহলে এই সরকার জানেটা কী?”
তিনি অভিযোগ করেন, এসব ঘটনা দেখিয়ে দেয় যে, সরকার আসলে কার স্বার্থে কাজ করছে, সেটি জনগণের কাছে এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
তারেক রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো অত্যন্ত সুকৌশলে নানা ইস্যু তৈরি করে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। এতে করে যাঁরা অতীতে স্বৈরাচারের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, তাঁদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রও তৈরি করা হতে পারে।”
তাঁর মতে, সরকার যেন জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে কিছু গোষ্ঠীর নিরাপদ প্রস্থানের পথ তৈরি না করে দেয়, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, “বিএনপি এখনো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব দেখিয়ে যাচ্ছে। তবে এই সরকার আদৌ দায়িত্ব পালনে সক্ষম কি না, সে নিয়ে জনগণের মনে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যেও এই প্রশ্ন ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।”
সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান ও সমান অধিকার নিয়ে তারেক রহমান বলেন, “কে সংখ্যালঘু বা কে সংখ্যাগুরু—এই বিভাজন আধুনিক রাষ্ট্রে কোনো অর্থ বহন করে না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ অংশ নিয়েছে, আজও এই ঐক্য ধরে রাখা জরুরি।”
তিনি বলেন, “এই দেশ কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়, এটি দেশের জনগণের। তাই বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও ইনসাফভিত্তিক মানবিক রাষ্ট্র গঠনে সবার সম্মিলিত প্রয়াস দরকার।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “প্রতিটি ধর্ম মানুষকে ভালো হতে শেখায়। ধর্ম নিয়ে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। স্বাধীনতার সময় সব ধর্মের মানুষ যেভাবে একত্র হয়েছিল, সেই ঐক্যই আমাদের পথ দেখায়।”
বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের সভাপতি জন গমেজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ত্রুজ ওএমআই, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন খ্রিষ্টান ফোরামের মহাসচিব অনিল লিও কস্তা।
Leave a comment