বর্তমান বিশ্বে স্থূলতা (Obesity) এক নিঃশব্দ মহামারিতে রূপ নিয়েছে। অনেকের কাছে এটি হয়তো কেবল অতিরিক্ত ওজন হিসেবে বিবেচিত হলেও, বিজ্ঞান বলছে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগ—যা শরীরের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে ক্ষয় ঘটায়। সম্প্রতি এক্স-রে চিত্রে মানুষের শরীরে স্থূলতার প্রতিক্রিয়া যেভাবে ধরা পড়েছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সমস্যার গভীরতা।
এই এক্স-রে দৃশ্যগুলোতে দেখা গেছে, কীভাবে অতিরিক্ত চর্বি শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। প্রথমেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাঁটু, কোমর ও মেরুদণ্ড। স্থূলতার কারণে এসব জয়েন্টে বাড়তি চাপ পড়ে, যার ফলে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, বাত রোগ ও স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়।
শুধু হাড় নয়, হৃদপিণ্ডের উপরেও সৃষ্টি হয় মারাত্মক চাপ। অতিরিক্ত ওজনের শরীরে রক্ত সঞ্চালনের জন্য হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এমনকি হৃদপিণ্ডের আকস্মিক বিকল হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে।
এছাড়াও, অতিরিক্ত ফ্যাট জমে যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয়। এতে তৈরি হয় ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। চিকিৎসকদের মতে, স্থূলতা আজ বিশ্বব্যাপী অন্তত ১৩ ধরনের ক্যানসারের সঙ্গেও জড়িত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থূলতা শুধু একজন ব্যক্তির সমস্যা নয়—এটি একটি সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য ইস্যু। তবে আশার কথা হলো, সময়মতো পদক্ষেপ নিলে এ রোগ প্রতিরোধযোগ্য এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে চিকিৎসা গ্রহণ—এই সহজ পরিবর্তনগুলো অনেক জীবন বাঁচাতে পারে। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো—স্থূল ব্যক্তিদের প্রতি বিদ্রূপ নয়, বরং সহানুভূতিশীল আচরণ ও সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া।
আত্মভালোবাসা এবং স্বাস্থ্য—দুটোই একে অপরের পরিপূরক। তাই সময় এসেছে স্থূলতার বিরুদ্ধে কেবল শারীরিক নয়, সামাজিক ও মানসিক লড়াইয়ে একত্রে দাঁড়ানোর। কারণ, এটি শুধুমাত্র অতিরিক্ত ওজনের প্রশ্ন নয়, এটি মানুষের টিকে থাকার লড়াই।
Leave a comment