Home আন্তর্জাতিক সৌদির সমর্থন পেলেই ইরানে হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র!
আন্তর্জাতিকমধ্যপ্রাচ্য

সৌদির সমর্থন পেলেই ইরানে হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র!

Share
Share

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে। সম্প্রতি পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইরান যদি আলোচনার টেবিলে না আসে, তাহলে “সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে”— এমন হুঁশিয়ারি এসেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

তবে ইরানের পক্ষ থেকেও এসেছে পাল্টা বার্তা। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, “কোনো ধরনের হুমকি বা চাপের কাছে ইরান মাথা নত করবে না। কেউ যদি হামলার চেষ্টা করে, তা হলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।”

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সম্পর্ক ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই বৈরী। শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পতনের পর মার্কিন দূতাবাসে জিম্মি সংকট ঘটলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এরপর থেকে নানা সময়ে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্র করে।

২০১৫ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের আমলে ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর (P5+1) মধ্যে একটি পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন, যার ফলে আবারও টানাপোড়েন শুরু হয়।

২০২৫ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং দাবি করে, তেহরান আবার গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে অগ্রসর হচ্ছে। ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (CENTCOM) প্রধান জেনারেল মাইকেল এরিক কুরিলা সম্প্রতি সৌদি আরব, কাতার ও বাহরাইনে সফর করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব সফরের উদ্দেশ্য হলো উপসাগরীয় মিত্রদের সঙ্গে নিরাপত্তা ও কৌশলগত সমন্বয় বাড়ানো।

তবে সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলো এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি কোনো সামরিক পদক্ষেপে প্রকাশ্য সমর্থন দেয়নি। সৌদি কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ চান না এবং কূটনৈতিক সমাধানেই বিশ্বাস রাখেন।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিশ্লেষক ড. লিনা আল-হাতিম বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার এই উত্তেজনা সত্যিই উদ্বেগজনক। কিন্তু সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা এখনো কম, কারণ উভয় পক্ষই জানে— যুদ্ধের পরিণতি কী ভয়াবহ হতে পারে।”

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি ভুল বোঝাবুঝি বা উসকানিমূলক কোনো হামলা ঘটে, তাহলে তা পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে রূপ নিতে পারে।”

ইরানের অভ্যন্তরে সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছে, কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে সাধারণত সরকার ও জনগণ এক হয়। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি এবং প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ইতিমধ্যে বলেছেন, “ইরান যেকোনো মূল্যে তার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে।”

বর্তমান পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ চরমে। কূটনৈতিক পথই এখন সবচেয়ে যৌক্তিক সমাধান বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু এই সংকট যদি সময়মতো নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে তা শুধু ইরান-যুক্তরাষ্ট্র নয়— পুরো অঞ্চলের জন্যই অস্থিরতা বয়ে আনতে পারে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

ব্রিটিশ দুই আইনপ্রণেতাকে আটক করল ইসরায়েল

ইসরায়েল যুক্তরাজ্যের আইনসভার দুই সদস্যকে আটক করেছে ।ব্রিটিশ আইনসভার একটি প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে তারা ইসরায়েল সফরে গিয়েছেন। তবে তাদের কোনো কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়নি...

মোদি সরকারের মুসলমানবিরোধী পদক্ষেপ হচ্ছে ওয়াকফ বিল : আসিফ নজরুল

গত বৃহস্পতিবার ভারতের পার্লামেন্টে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। যাকে কেন্দ্র করে এখন ক্ষোভে ফুঁসছে ভারতের মুসলামনরা।  এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও । এই...

Related Articles

ইসরাইলি হামলা সাংবাদিকদের তাঁবুতে, নিহত ১

ইসরাইল ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় সাংবাদিকদের তাঁবুতে হামলা চালিয়েছে । এতে এক সাংবাদিক...

গ্রেপ্তার এড়াতে নেতানিয়াহু ৪০০ কিমি ঘুরে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন

সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল ও মিডল ইস্ট আই সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে...

হামাসের রকেট হামলায় কাঁপল ইসরায়েল, আহত ৩

হামাস ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের আশদাদ শহরে রকেট হামলা চালিয়েছে ।...

ইউনূস-মোদি বৈঠকে আলোড়ন, হতাশা আওয়ামী শিবিরে

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের...