ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে যার নাম জড়িয়ে আছে, সেই সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের অস্তিত্ব নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে রয়েছে নানা মতবিরোধ। একাধিক কাহিনি প্রচলিত থাকলেও, প্রকৃতপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না, যা নিশ্চিতভাবে তাঁর অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
রোমান সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াস ক্লডিয়াস (214-270 খ্রিস্টাব্দ) সৈন্যদের বিবাহ নিষিদ্ধ করেছিলেন, কারণ তাঁর বিশ্বাস ছিল, যোদ্ধাদের কোনো পারিবারিক বন্ধন না থাকলে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে আরও সাহসী হয়ে উঠবে। কিন্তু কথিত আছে, বিশপ ভ্যালেন্টাইন প্রেম ও বিবাহের গুরুত্ব বিশ্বাস করতেন এবং তিনি গোপনে সৈন্যদের বিয়ে দিতেন। এতে সম্রাট ক্ষুব্ধ হন এবং তাঁকে শাস্তি দেন।
ভ্যালেন্টাইনকে নিয়ে আরও কিছু গল্প প্রচলিত রয়েছে। এক কাহিনিতে বলা হয়, তিনি রাস্তায় গোলাপ বিতরণ করতেন, যা প্রেমের প্রতীক হয়ে ওঠে। অন্য একটি গল্প অনুসারে, তিনি সৈন্যদের জন্য কাগজে হৃদয়ের প্রতীক তৈরি করতেন, যা তারা তাঁদের প্রিয়জনদের কাছে পাঠিয়ে ভালোবাসার বার্তা দিত।
আরেকটি গল্পে বলা হয়, ভ্যালেন্টাইন ছিলেন একজন ধর্মযাজক, যিনি প্রেমের প্রকৃত অনুভূতি উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি এক খ্রিস্টান যুবক ও তাঁর প্যাগান বান্ধবীর মিলনকে বৈধতা দেন এবং তাঁদের বিয়ে পড়ান। এটি ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে বিতর্কিত ছিল, কারণ প্যাগানরা তখন বহু-ঈশ্বরবাদে বিশ্বাস করতেন এবং খ্রিস্টানদের সঙ্গে তাঁদের মতবিরোধ ছিল।
ইতিহাসবিদরা মনে করেন, ভালোবাসা দিবসের ভিত্তি হতে পারে রোমান সাম্রাজ্যের প্রাচীন উৎসব লুপারকালিয়া, যা ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি উদযাপিত হতো। পরে ক্যাথলিক চার্চ প্রেমের বার্তাবাহক হিসেবে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের চরিত্র তৈরি করে থাকতে পারে।
যদিও এইসব কাহিনি আকর্ষণীয়, তবে ভ্যালেন্টাইনের প্রকৃত অস্তিত্ব নিয়ে এখনো সন্দেহ থেকেই যায়। ইতিহাসে তাঁর অবস্থান নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত না হলেও, তিনি আজও ভালোবাসার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।
Leave a comment