সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় শান্তিরক্ষীর মরদেহ আগামী শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে পৌঁছাবে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় দেশজুড়ে শোক ও গভীর উদ্বেগের আবহ তৈরি হয়েছে।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ যথাযথ আনুষ্ঠানিকতা শেষে দেশে ফিরিয়ে আনার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে।
আইএসপিআর জানায়, গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় অবস্থিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী ড্রোন হামলা চালানো হয়। এই আকস্মিক হামলায় প্রথমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আটজন শান্তিরক্ষী আহত হন। পরে হালনাগাদ তথ্যে আরও একজন শান্তিরক্ষী আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়ায় নয় জনে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, হামলার পরপরই আহত সব বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তাদের শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, আহতদের চিকিৎসায় কোনো ধরনের ঘাটতি রাখা হয়নি।
সুদানে সংঘটিত এই হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের মতো একটি সুরক্ষিত ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালানো আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, শান্তিরক্ষীরা কোনো যুদ্ধরত পক্ষ নয়; বরং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য কাজ করেন। ফলে তাদের ওপর এমন হামলা বিশ্বশান্তির জন্য গুরুতর হুমকি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা, বেসামরিক জনগণের সুরক্ষা এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। সুদানের আবেই অঞ্চলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
এই ঘটনায় নিহত ছয় শান্তিরক্ষীর আত্মত্যাগ জাতির জন্য এক গভীর বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নিহতদের মরদেহ দেশে পৌঁছানোর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের প্রতি প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সম্মান প্রদর্শনের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আইএসপিআর সূত্রে জানা গেছে, নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের বিষয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রয়েছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিও জানানো হয়েছে, যাতে হামলার পেছনে দায়ীদের শনাক্ত করে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আনা যায়।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তর থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা, সামরিক কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট নাগরিকরা নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সাধারণ মানুষ গভীর শোক ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ড্রোন প্রযুক্তির অপব্যবহার সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে নতুন মাত্রার নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্যদের নিরাপত্তা জোরদারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত হুমকি মোকাবিলায় শান্তিরক্ষা বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
Leave a comment