চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জলিলগেট এলাকায় একটি বেসরকারি তেলের ডিপোতে ট্যাংকের বর্জ্য পরিষ্কার করতে গিয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আরও তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে জামাল কোম্পানির মালিকানাধীন ওই ডিপোতে এ ঘটনা ঘটে। অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে শ্রমিকেরা ট্যাংকের ভেতরেই অচেতন হয়ে পড়েন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিপোর ভেতরে শ্রমিকেরা নিয়মিত তেল প্রক্রিয়াজাতকরণ শেষে ট্যাংকের নিচে জমে থাকা বর্জ্য অপসারণের কাজ করেন। বৃহস্পতিবার রাতেও এক শ্রমিক ওই বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য ভেতরে নামলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর একে একে তাঁকে উদ্ধারের জন্য আরও তিনজন শ্রমিক নিচে নামেন। তারাও একইভাবে জ্ঞান হারান। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ডিপোর অন্য কর্মীরা দ্রুত ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন।
খবর পেয়ে কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে অচেতন অবস্থায় চার শ্রমিককে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। নিহত শ্রমিকের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম জানান, আহতদের মধ্যে মীর আহমদ (২৮), মোহাম্মদ আরিফ (২৯), মোস্তফা কামাল (৩৫) ও পেয়ারু হাসান (৩৮) হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা আল মামুন জানান, ঘটনাস্থলে থাকা ট্যাংকটি একটি সিলিন্ডার আকৃতির এবং এতে স্ক্র্যাপ জাহাজ থেকে সংগ্রহ করা পরিত্যক্ত কালো তেল প্রক্রিয়াজাত করা হতো। সেখানে মবিলসহ বিভিন্ন তৈলজাত পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করা হতো। প্রক্রিয়াজাত তেলের নিচে জমে থাকা বিষাক্ত বর্জ্য শ্রমিকদের হাতে পরিষ্কার করতে হতো, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার সময় ট্যাংকে কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। অক্সিজেনের অভাবে শ্রমিকেরা সেখানে আটকা পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। এ ধরনের কাজে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ ছাড়া কাউকে নিয়োজিত করা ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রাণঘাতী হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ঘটনায় ডিপো কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। স্থানীয় প্রশাসন ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা এবং মৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।
Leave a comment