সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নামসহ কল আসার একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। বিষয়টি ঘিরে বিএনপির ভেতরেই তৈরি হয়েছে বিভক্তি, উঠেছে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরের বারুতখানা এলাকায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের এক বৈঠকের সময় এই ঘটনা ঘটে। বৈঠক চলাকালীন মাগরিবের নামাজের জন্য বাইরে গেলে ইমদাদের মোবাইল ফোনটি একজন সহকর্মীর কাছে রেখে যান তিনি। ঠিক তখনই তার ফোনে ‘আনোয়ারুজ্জামান ইউকে’ লেখা একটি নাম্বার থেকে কল আসে। দৃশ্যটি উপস্থিত কয়েকজন ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে শুরু হয় আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়।
রাতেই এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী দাবি করেন, পুরো বিষয়টি পরিকল্পিতভাবে সাজানো এবং তার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা। তিনি জানান, ঘটনাস্থলে ছবি তোলার জন্য আখতার নামের এক ব্যক্তি তার মোবাইলটি হাতে রাখেন। পরে ফোনে কল আসার বিষয়টি জানার পর তিনি কললিস্ট ঘেঁটে বিষয়টি নিশ্চিত হন এবং আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আখতার জানান, ফোনটি তার হাতে থাকাকালীন সিলেট বিএনপির বিমানবন্দর থানা শাখার সদস্যসচিব সৈয়দ সারোয়ার রেজা ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর পিএস ইমন তাকে সঙ্গে নিয়ে আলাদা একটি টেবিলে বসেন। সেসময় ইমদাদের মোবাইলের ডিসপ্লের ছবি তোলেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ইমদাদ হোসেন আরও বলেন, “আনোয়ারুজ্জামান যিনি সিলেটের রাজনীতিকে কলুষিত করেছেন, যিনি আমাদের কর্মীদের ওপর হামলার মদদ দিয়েছেন, তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ থাকার প্রশ্নই ওঠে না। পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে আমার জনপ্রিয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ নোংরা কৌশল নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে হয়তো ৮–১০ বছর আগে আনোয়ারুজ্জামানের নাম্বার তার ফোনে সংরক্ষিত হয়েছিল, তবে কখনো তার সঙ্গে কথা হয়নি। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইমদাদ ইঙ্গিত দেন, পুরো ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। যদিও লোদী এই অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমার কোনো পিএস নেই এবং আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে আগ্রহী নই।”
অন্যদিকে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর লন্ডনে পাড়ি দেওয়া আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী কেন হঠাৎ করে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতাকে ফোন করবেন? নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো যোগাযোগ বা আঁতাত রয়েছে। এ বিষয়ে দলীয় পর্যায়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।”
স্থানীয় বিএনপির সূত্র জানায়, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে ইমদাদ হোসেন ও কয়েস লোদী—উভয়েই প্রতিযোগিতায় রয়েছেন। এছাড়া সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় নেতা মিফতাহ্ সিদ্দিকীর নামও আলোচনায় রয়েছে। ফলে এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে অনেকেই দায়ী করছেন।
তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি নিয়ে এখনো দলীয় কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা স্পষ্ট। দলীয় নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ শীতল যুদ্ধ যে এখন প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে, এ ঘটনার পর তা আর অস্বীকার করার উপায় থাকছে না। দলের তৃণমূলে বার্তা যাচ্ছে, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব এখন শুধুই কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা রূপ নিচ্ছে সংঘাতমুখী কৌশলে।
Leave a comment