সাগরে দুই দফা নৌকাডুবিতে অন্তত ৪২৭ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ৯ ও ১০ মে অনুষ্ঠিত এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাকে চলতি বছরের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সাগর–দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে সংস্থাটি। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) কার্যালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, এ তথ্য নিশ্চিত হলে তা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই দুটি নৌকাডুবির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংস্থাটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং দুর্ঘটনার সঠিক প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা জানার জন্য এখনো অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ৯ মে একটি নৌকায় ২৬৭ জন রোহিঙ্গা যাত্রী ছিলেন, যার মধ্যে মাত্র ৬৬ জন প্রাণে রক্ষা পান। পরদিন ১০ মে আরেকটি নৌকায় ২৪৭ জন আরোহী ছিলেন, যার মধ্যে মাত্র ২১ জন জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। নিখোঁজ ও প্রাণহানির সংখ্যা মিলিয়ে মৃত্যু আশঙ্কার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২৭ জনে।
ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, নিহতরা হয় বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত শরণার্থীশিবির থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন, নয়তো মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে নিপীড়নের হাত থেকে রেহাই পেতে পালাচ্ছিলেন। এই ঘটনাগুলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চরম দুর্দশার বাস্তবতা তুলে ধরেছে।
ইউএনএইচসিআরের হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘‘এই দুই মর্মান্তিক ঘটনা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান নিপীড়ন এবং বাংলাদেশে বসবাসরত শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের প্রতিচ্ছবি। আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় তাদের জীবনের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে।’’
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন–পীড়নের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার ও আশপাশের শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নানা প্রতিকূলতার কারণে অনেকেই সাগরপথে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাত্রা শুরু করেন।
জাতিসংঘের মতে, এই ধরনের বিপজ্জনক সাগরযাত্রা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও মানবিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায়, প্রতি বছরই নতুন করে সাগরে রোহিঙ্গা মৃত্যুর ট্র্যাজেডি বারবার ফিরে আসবে।
Leave a comment