Home অর্থনীতি সরকারি চাকরিজীবীদের বাড়তি সুবিধা, সাধারণের কাঁধে করের বাড়তি বোঝা
অর্থনীতিজাতীয়

সরকারি চাকরিজীবীদের বাড়তি সুবিধা, সাধারণের কাঁধে করের বাড়তি বোঝা

Share
Share

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঢেউ। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত এই বাজেটে একদিকে আয়কর বাড়ানোর পরিকল্পনা, অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ‘বিশেষ আর্থিক সুবিধা’র ঘোষণা—এ দুই বিপরীতমুখী পদক্ষেপ জনমনে প্রশ্ন তুলেছে বৈষম্য ও ন্যায়বিচারের বিষয়টি নিয়ে।

বাজেট ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জারি হওয়া সরকারি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, নবম গ্রেড পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১০ শতাংশ এবং তার ওপরের গ্রেডের কর্মীরা ১৫ শতাংশ বাড়তি আর্থিক সুবিধা পাবেন। এই ঘোষণা সরকারি চাকরিজীবীদের একাংশের মধ্যে যেমন স্বস্তি এনেছে, তেমনি আরেক অংশের দাবি, কেবল বেতন বৃদ্ধি নয়, বরং ‘মহার্ঘ ভাতা’ পুনর্বহাল হলে তা আরও বাস্তবসম্মত হতো। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে শুধু বেতন বাড়িয়ে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেও মত দিয়েছেন কেউ কেউ।

তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসরকারি খাতে কর্মরত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষজন। কর বৃদ্ধির ঘোষণায় অনেকেই মনে করছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বাজেট স্বস্তির হলেও সাধারণ মানুষের জন্য তা হয়ে উঠেছে বোঝার আরেক নাম। রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্যবস্থাপক মিঠুন শিকদার বলেন, “সরকার যাদের আয়ের খোঁজ নেয়, তাদের কেবল করই বাড়ায়; অথচ বাস্তবে আয় বাড়ে না। এটা বড় বৈষম্য।”

একজন বেসরকারি কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকারি বেতন বাড়ল মানেই কাল থেকে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। এতে করে আবারও সাধারণ মানুষ চাপে পড়বে।” তিনি আরও বলেন, “এই সিদ্ধান্ত একরকম ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়াবে।”

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী মহলেও এই বাজেট নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। তাদের মতে, বাজেটে যে ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে তা দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “কর বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক থাকলেও করের আওতা বাড়ানো ছাড়া এটি দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হবে না। সরকার অতীতের মতোই সহজ পথ বেছে নিয়েছে।”

তারা মনে করেন, যখন দেশে মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান সংকট ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা চরমে—ঠিক সেই সময়ে কেবল সরকারি একটি শ্রেণিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জনমানুষের জীবনযাত্রায় আরও চাপ সৃষ্টি করবে। এতে বৈষম্য আরও প্রকট হবে এবং দুর্বল হবে কর কাঠামোর প্রতি জনগণের আস্থা।

অবশেষে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই বাজেট কি সত্যিই অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর, নাকি এটি কেবল একটি শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার দিকে ঝুঁকে গেছে? আগামী দিনে এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের জীবনে কী প্রভাব ফেলবে, তার উত্তর দেবে সময়ই।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

মৌলভীবাজারে বড় ভাইকে কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার ছোট ভাইয়ের

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বড় ভাই আব্দুর রহিম রাফি (৩২) নামে এক ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন তার ছোট ভাই আব্দুল করিম...

১৬২ দিনে কোরআনে হাফেজ হলেন চাঁদপুরের সাব্বির

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার মাদ্রাসা-ই শাজুলিয়ার ছাত্র মো. সাব্বির হোসেন ১৪ বছর বয়সে, মাত্র ১৬২ দিনে সম্পূর্ণ পবিত্র কোরআন মুখস্ত করে হাফেজ হওয়ার গৌরব...

Related Articles

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টি-শার্ট রপ্তানিতে শীর্ষে বাংলাদেশ

পাল্টা শুল্কের চাপ মোকাবিলা করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বছরের প্রথম ছয় মাসে টি-শার্ট...

সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ৪২ ধরনের আয় করমুক্ত

দেশের সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট ৪২...

“আমি ভবের পাগল নই, ভাবের পাগল” — সমু চৌধুরীর খোলামেলা স্বীকারোক্তি

ছোট ও বড় পর্দার পরিচিত মুখ সমু চৌধুরী সম্প্রতি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনার...

খালেদা জিয়ার জন্মদিনে দেশজুড়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে বিএনপি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার...