সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে? এআই কি সংবাদপত্রের বিকাশ ঘটাবে নাকি এর অস্তিত্ব সংকটে ফেলবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ইতালির সংবাদপত্র ইল ফোইও অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বে প্রথমবারের মতো তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সংবাদপত্রের একটি সম্পূর্ণ ‘এআই সংস্করণ’ প্রকাশ করেছে।
পত্রিকাটির পরিচালক ক্লডিও সেরাসা জানান, তাদের উদ্দেশ্য সাংবাদিকতাকে ধ্বংস করা নয়, বরং এর নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা। গত মঙ্গলবার ইল ফোইও চার পৃষ্ঠার একটি এআই সংস্করণ প্রকাশ করে, যেখানে প্রতিটি প্রতিবেদন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে লেখা হয়েছে।
এআই সংস্করণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির বক্তব্য বিশ্লেষণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ফোনালাপ নিয়ে সম্পাদকীয় এবং ফ্যাশন জগতের খবরসহ নানান বিষয় উঠে এসেছে। এটি মূল পত্রিকার পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে, যা প্রযুক্তি ও গণমাধ্যম জগতে বেশ সাড়া ফেলেছে।
ক্লডিও সেরাসা জানান, প্রতিটি প্রতিবেদনের জন্য এআইকে নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে, যাতে ইল ফোইওর স্বতন্ত্র লেখনীর ধরন বজায় থাকে। যদি প্রতিবেদনে বড় কোনো ভুল ধরা পড়ে, তবে এআইকে সংশোধন করতে বলা হয়। তবে সামান্য ত্রুটিগুলো রেখে দেওয়া হয়েছে, যাতে এআইয়ের সীমাবদ্ধতা ও দক্ষতা ভালোভাবে বোঝা যায়।
এই উদ্যোগ থেকে কী শেখা গেল? ক্লডিওর মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক প্রত্যাশার চেয়েও ভালো কাজ করছে এবং সাংবাদিকতার সঙ্গে প্রতিযোগিতার মতো অবস্থানে চলে এসেছে। তবে মানব সাংবাদিকদের দক্ষতা বাড়িয়ে ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী হতে হবে। তিনি বলেন, “এআইকে ঠেকানো যাবে না, বরং এটিকে বুঝতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং সুযোগে রূপান্তর করতে হবে।
এই এআই সংস্করণ প্রকাশের পর পাঠকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ৯০ শতাংশ পাঠক ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন, তবে ১০ শতাংশ কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেউই একে অর্থহীন বা হাস্যকর উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন না, বরং কৌতূহল নিয়ে গ্রহণ করছেন।
সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া কেমন? ক্লডিওর মতে, এআই তাদের জায়গা দখল করতে আসেনি, বরং সংবাদপত্রকে নতুনভাবে উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি করছে। এআই সংস্করণ চালুর পর পত্রিকার বিক্রি ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রমাণ করে যে পাঠকেরা এ ধরনের উদ্ভাবন মেনে নিচ্ছেন।
এই উদ্যোগ কি ভবিষ্যতে সাংবাদিকতার চেহারা বদলে দেবে? নাকি এটি শুধুই একটি পরীক্ষা? তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটুকু স্পষ্ট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন গণমাধ্যম জগতের এক অনিবার্য বাস্তবতা।
Leave a comment