শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথমবারের মতো কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আজ তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ২–১ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নেয় টাইগাররা। এই জয়ে ব্যাটে জ্বলে উঠলেন তানজিদ হাসান, আর বল হাতে বিধ্বংসী ভূমিকা রাখলেন মেহেদী হাসান।
প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩২ রান করে। বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন মেহেদী হাসান, মাত্র ১১ রান দিয়ে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন তিনি। তার অফস্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে উইকেট হারান কুশল পেরেরা, দিনেশ চান্ডিমাল, চারিত আসালাঙ্কা ও পাঠুম নিশাঙ্কা। স্পিনারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপরীতে ব্যাটিংয়ে ছিল না কোনো ছন্দ। মোস্তাফিজুর রহমান ও শামীম হোসেন মাঝেমধ্যে চাপ ধরে রাখলেও শরীফুল ইসলামের খরুচে বোলিংয়ের কারণে শেষদিকে কিছুটা রান তুলতে সক্ষম হয় স্বাগতিকরা। শরীফুল ৪ ওভারে দিয়েছেন ৫০ রান, যার ২২ রান আসে শেষ ওভারে।
বাংলাদেশের রান তাড়া শুরুটা যদিও এলবিডব্লু হয়ে আউট হওয়া পারভেজ হোসেনের সঙ্গে ধাক্কা খায়, তবুও ব্যাটিংয়ে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন অধিনায়ক লিটন দাস ও ওপেনার তানজিদ হাসান। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনে গড়েন ৭৪ রানের জুটি, যার বড় অংশই আসে তানজিদের ব্যাট থেকে। আগের কিছু ম্যাচে রান না পেলেও এদিন আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তানজিদ। ৪৭ বলে ৭৩ রানের ঝলমলে ইনিংসে তিনি মেরেছেন ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা। তার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন তাওহিদ হৃদয়, যিনি ২৫ বলে ২৭ রান করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফিফটির মাধ্যমে তানজিদ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের সেরা ইনিংস উপহার দিলেন। আর বল হাতে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেন মেহেদী হাসান। দুজনের সম্মিলিত পারফরম্যান্সেই রচিত হলো বাংলাদেশের এক নতুন ইতিহাস—শ্রীলঙ্কায় প্রথমবারের মতো কোনো সিরিজ জয়।
প্রথম দুই ম্যাচে মাঠের বাইরে থাকলেও শেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে দারুণভাবে নিজের জায়গার প্রমাণ দিয়েছেন মেহেদী। আর রানখরায় ভোগা তানজিদ ম্যাচের চূড়ান্ত মঞ্চে দাঁড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন, প্রতিভা ঠিক সময়েই ঝলক দেখায়।
এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল শুধু একটি সিরিজই জেতেনি, বরং দীর্ঘদিনের শ্রীলঙ্কা-জুজু কাটিয়ে বিদেশের মাটিতে নিজেদের সামর্থ্য আবারও প্রমাণ করেছে।
Leave a comment