Home বিনোদন চলচ্চিত্র শেষ জীবনে সন্তানেরাও ছেড়ে চলে যান আলোচিত এই নায়িকার
চলচ্চিত্রবিনোদন

শেষ জীবনে সন্তানেরাও ছেড়ে চলে যান আলোচিত এই নায়িকার

Share
Share

রাজ কাপুরের ক্যামেরা থেকে যশ চোপড়ার স্বপ্নিল ফ্রেম—বলিউডের এক সোনালি যুগে অচলা সচদেব ছিলেন অপরিহার্য নাম। রাজেশ খান্না, দেব আনন্দদের সঙ্গে সমানতালে অভিনয় করেছেন, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’-তে কাজলের দাদির চরিত্র কিংবা ‘ওয়াক্ত’-এর অমর গান আয়ে মেরি জোহরা জবীন-এর নায়িকা হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয়। পঞ্চাশের দশকে শুরু হওয়া তাঁর অভিনয়যাত্রা ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে ছড়িয়ে ছিল, কিন্তু আলো ঝলমলে এই পথের শেষ প্রান্তে ছিল গভীর নিঃসঙ্গতা ও অবহেলা।

জন্ম ১৯২০ সালে পেশোয়ারে। কর্মজীবনের শুরু আকাশবাণীতে ঘোষিকা হিসেবে, দেশভাগের আগে লাহোরে কাজ করেছেন। ১৯৫০-এর দশকে ‘দিলরুবা’ ছবিতে দেব আনন্দের বোনের চরিত্রে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ। এরপর ‘মেরা নাম জোকার’, ‘জুলি’, ‘হিমালয় কি গোদ মে’, ‘হকিকত’, ‘নাইন আওয়ার্স টু রামা’সহ শতাধিক হিন্দি ও ইংরেজি ছবিতে অভিনয় করেন। ১৯৬৫ সালের ‘ওয়াক্ত’ তাঁর ক্যারিয়ারে নতুন উচ্চতা যোগ করে। বয়সের সঙ্গে মা-দাদির চরিত্রে সীমাবদ্ধ হলেও ২০০০-এর দশক পর্যন্ত কাজ চালিয়ে গেছেন; করণ জোহরের ‘কাভি খুশি কাভি গম’ তাঁর শেষ দিকের আলোচিত কাজগুলোর একটি।

ব্যক্তিজীবনে সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৭০-এর দশকে ব্রিটিশ নাগরিক ক্লিফোর্ড ডগলাস পিটার্সকে বিয়ে করে পুনেতে বসবাস শুরু করেন। যশ চোপড়ার মাধ্যমে পরিচয় হওয়া এই দম্পতির আগেও ছিল আলাদা বৈবাহিক জীবন। ক্লিফোর্ডের মৃত্যুর পর নিঃসঙ্গতা ঘিরে ধরে অচলাকে। ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান, মাঝে মাঝে ফোনে কথা হলেও দেখা-সাক্ষাৎ কমে যায়। মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় বহু আগেই।

জীবনের শেষ ১২ বছর কাটান পুনের দুই কামরার ফ্ল্যাটে, পাশে শুধু এক সেবিকা—যাকে নিয়োগ দিয়েছিল জনসেবা ফাউন্ডেশন। এই সংস্থার জন্যই তিনি গড়ে তোলেন ‘অচলা সচদেব ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন’, যেখানে পাহাড়ি ও আদিবাসী অঞ্চলের তরুণদের হাসপাতাল ও রোগী সেবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগে বাড়িটি দান করে দেন এই সংস্থাকে।

২০১২ সালে ৯১ বছর বয়সে পুনের এক হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও জীবনের শেষ প্রান্তে খুব কম মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। মৃত্যুর পর অমিতাভ বচ্চন ও একতা কাপুর প্রকাশ্যে শ্রদ্ধা জানান। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছেলে জ্যোতিন এসে কজন আত্মীয়ের সঙ্গে শেষকৃত্যে অংশ নেন।

অচলা সচদেবের গল্প শুধু এক নায়িকার সাফল্য ও পতনের কাহিনি নয়, বলিউডের নির্মম বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। যেখানে একসময় আলো ছড়ানো শিল্পীরাও বয়স ও সময়ের চাপে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যান। তবু তাঁর অভিনয়, তাঁর চরিত্র, আর বলিউডের রূপালি পর্দায় রেখে যাওয়া অমলিন মুহূর্ত চিরকাল মনে করিয়ে দেবে—অচলা সচদেব ছিলেন এক অনন্য নক্ষত্র, যিনি শেষ জীবনেও আলো বিলিয়ে গেছেন নীরবে।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

জনগণের প্রতি সদয় আচরণে জোর দিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব

পুলিশ সদস্যদের অহংকার ও অন্ধ আনুগত্য বর্জন করে জনগণের সঙ্গে সুবিচার ও সদয় ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল...

ফেসবুকে ইলিশ বিক্রির ফাঁদ, গ্রেপ্তার দুই প্রতারক

ফেসবুক পেজে ইলিশ মাছ বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। নড়াইল জেলার দুটি পৃথক স্থানে...

Related Articles

রক্ষক নাকি ভক্ষক—আফরান নিশোর ‘আকা’তে রহস্যের খেলা

প্রায় তিন বছর পর আবারও ওটিটিতে ফিরছেন জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো। হইচইয়ের...

ক্যানসার জয় করেও কেন বলিউডে অবহেলার শিকার হিনা খান

দীর্ঘ লড়াই শেষে ক্যানসার জয় করেছেন জনপ্রিয় ভারতীয় অভিনেত্রী হিনা খান। এক...

৪ কোটিতে নির্মিত কন্নড় ভাষার সিনেমার আয় ৫০ কোটি

ভারতের চলচ্চিত্র ইতিহাসে বিরল এক সাফল্যের গল্প রচনা করেছে কন্নড় ভাষার হরর-কমেডি...

মাত্র ১১ বছরেই মিলিয়নিয়ার হয়েছিলেন ম্যাকলেই কালকিন

হলিউডে এমন অনেক তারকা আছেন যারা অল্প বয়সে খ্যাতি ও সম্পদ অর্জন...