হারিকেন ওটিসের তাণ্ডবে মেক্সিকোর আকাপুলকো শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার পর যখন মানুষ জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে, তখন সেই দুর্যোগের মাঝেই ফুটে উঠল মানবতার এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। মেক্সিকো সিটি পুলিশের নারী সদস্য আরিজবেথ দিয়োনিসিও অ্যামব্রোসিওর একটি মুহূর্ত আজ পুরো দেশের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে—কেবল সাহস নয়, এক অসাধারণ মমতার নিদর্শন হিসেবেও।
চিলিতে জন্ম নেওয়া আরিজবেথ বর্তমানে মেক্সিকোতে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে। ভয়াবহ ঝড়ের পর তিনি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেখতে পান এক হতভাগা মা তাঁর চার মাস বয়সী শিশুকে কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে গত প্রায় দুই দিন ধরে শিশুটি কিছুই খায়নি। সেই সময় নিজের দুধে যে সন্তানকে দিচ্ছেন, সেই বুকের দুধ দিয়ে ওই ক্ষুধার্ত শিশুকে দুধ খাওয়ান পুলিশ কর্মকর্তা আরিজবেথ—যে ঘটনা ধরা পড়ে এক আলোকচিত্রী ক্যামেরায়।
দৃশ্যটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার মানুষ মন্তব্যে জানান, তাঁরা আরিজবেথের এই মমতা, মানবতা ও তাৎক্ষণিক সাহসিকতায় অভিভূত। অনেকেই বলেন, বিপর্যয়ের মুহূর্তে পুলিশি দায়িত্বের বাইরে গিয়ে একজন মানুষ যেভাবে আরেকজন মানুষকে জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসতে পারেন, তা যেন মানবতার সেরা উদাহরণ।
এই মানবিক সাহসিকতার স্বীকৃতি দিতে মেক্সিকো সিটি কর্তৃপক্ষ তাঁকে পদোন্নতি দিয়ে “সুবঅফিসিয়াল” পদে উন্নীত করে। সেইসঙ্গে তাঁকে গণমাধ্যমে সম্মাননা জানানো হয় এবং তিনি হয়ে ওঠেন শিশু সুরক্ষা ও নারী নেতৃত্বের প্রতীক।
সময়ের ভয়ংকরতম বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে একজন নারী পুলিশ যে সাহসিকতার সঙ্গে জীবন বাঁচিয়েছেন, তা শুধু একটি শিশুর জন্য নয়, গোটা জাতির জন্যই একটি বার্তা—প্রাকৃতিক দুর্যোগ যত বড়ই হোক, মানবতা এবং সহানুভূতির শক্তি তার চেয়েও বড়।
তাঁর এই কাহিনি এখন শুধু মেক্সিকো নয়, সারা বিশ্বের মানুষকে শেখাচ্ছে—বিপদের সময় মনুষ্যত্বই আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয়।
সূত্র: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
Leave a comment