মো: আলমগীর, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালান্দর শিংপাড়া গ্রামের এক বর্গাচাষি দম্পতির চার বিঘা জমিতে লাগানো লাউ গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। চুরি করতে এসে আটক হওয়া আব্দুর রহিম এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানান, বুধবার (৭ মে ) দিবাগত রাতের কোনও এক সময় বর্গাচাষি ওমর আলি দম্পতির ২একর জমির বেড়ে ওঠা লাউ গাছ কেটে দিয়েছে।
কৃষক ওমর আলি জানান, জমি লিছ নিয়ে ফসল আবাদ করেন তিনি। সুগার মিলের তিন একর জমি, ৩০ হাজার টাকা একর দরে লিছ নিয়ে সেই জমিতে লাউ গাছের বীজ বপন করেন। এরপর গাছ বের হতে থাকে। নিজেই পরিচর্যা করেন। গাছগুলোও তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ফুল ও ফল এসেছে। প্রতিদিনের ন্যায় মঙ্গলবার বিকালে চাষি ওমর আলী ও তার সহধর্মিণী মিলে লাউ ক্ষেতে পানি নিষ্কাশন করে সন্ধ্যায় বাড়িতে যান।
তিনি জানান, বুধবার সকালে ক্ষেতে গিয়ে দেখতে পান, লাউ গাছের পাতাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। বাঁশের মাচার নিচে তাকিয়ে তিনি দেখেন সব গাছের গোড়া কেটে দিয়েছে। রাতের আঁধারে আব্দুর রহিম, (ওরপে ভোলা) ক্ষেতের লাউ গাছগুলো কেটে ফেলেছে।
আক্ষেপ করে ওমর আলী আরও বলেন,গত রাতে আছমত আলির ছেলে আব্দুর রহিম করলা,পানি কুমরা চুরি করতে এসে ধরা পড়ে, স্থানীয় জনতা তাকে চড়থাপ্পড় দিয়ে আছমত আলির কাছে তুলে দেয়, সে আমার এই সর্বনাশ করেছে।
কৃষক ওমর আলি বলেন , আমি ‘ছোট বেলা থেকে দরিদ্রতার মাঝে বড় হয়েছি। কাউকে তুই বলেও গালমন্দ করিনি। মনে করি, আমার কোনও শত্রু নেই। কিন্তু আজ সেই ভাবনা মিথ্যে হল। সংসারে ছেলে-মেয়েদের মুখে দুবেলা খাবার জোগাতে রাতের ঘুম হারাম করে অন্যের জমি লিছ নিয়ে চাষাবাদ করে আসছি। আজ সেটিও তাদের সহ্য হলো না। কয়েকদিন পরই লাউ ধরতো গাছে। আমার সব আশা আজ ভেস্তে গেল। ভেবেছিলাম, লাউ বিক্রি করে ধারদেনা পরিশোধ করবো, তাও হলো না। এর সুষ্ঠু বিচারের আশায় থানায় অভিযোগ করেছি।’
প্রতিবেশী আকবর বলেন, গত রাতেই ভোলা নামে একজন চোর হাতেনাতে ধরা পড়েছিল , পরে তার পিতার জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়, সে নেশা করে, সে ছাড়া এই কাজ অন্য কেউ করতে পারে না।‘একজনের সঙ্গে আরেক জনের শত্রুতা থাকতেই পারে, তবে ফসলের সঙ্গে কেন? এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।’
আরেক প্রতিবেশী আবুল হোসেন বলেন, ‘যত বড় অপরাধ হোক না কেন- কারও ফসল কেটে ফেলা ঠিক হয়নি। যারা কেটে ফেলেছে তারা ওমর আলীর পেটে লাথি মেরেছে, তার পরিবারের গলায় পা তুলে দিয়েছে। ফসল কাটার বিচার হওয়া দরকার।’
এই বিষয়ে আব্দুর রহিম (ওরফে ভোলা) এর সাথে যোগাযোগ করতে তার বাসায় গেলে, আব্দুর রহিমের পিতা আছমত আলি বলেন, আমার ছেলে গতকাল রাতে বাসায় ছিলো, আমার ছেলে এইসব করেনি, তাদের অভিযোগ সব মিথ্যা।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার নাছিরুল ইসলাম জানান, আমি ঘটনা শুনে ঘটনা স্থলে আমাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছি, এবং স্থানীয় প্রশাসন সহ থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি, আর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সারোয়ার ইসলাম বলেন, ‘কৃষক ওমর আলী অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a comment