জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় রাস্তার পাশে কম্বলে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার হওয়া একদিন বয়সী নবজাতক কন্যাশিশুটি অবশেষে পেল নতুন ঠিকানা। আইনি প্রক্রিয়া, সামাজিক যাচাই-বাছাই এবং সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনায় শিশুটিকে একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের কাছে বৈধ অভিভাবক হিসেবে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে শিশুটি এখন নিরাপদ পরিবারে মা–বাবার স্নেহ ও যত্নে বেড়ে ওঠার সুযোগ পেল।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে ইসলামপুর উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের ১১ সদস্যের উপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হুসাইন আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুটিকে নতুন পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। শিশুটির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার স্বার্থে দত্তক নেওয়া পরিবারটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৮ ডিসেম্বর সকালে ইসলামপুর পৌর শহরের মোশারফগঞ্জ এলাকায় সড়কের পাশের ধানক্ষেতে একদিন বয়সী একটি কন্যাশিশুকে কম্বলে মোড়ানো অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। সকালে হাঁটতে বের হয়ে স্থানীয় যুবক শাহ জামাল কম্বলটি দেখতে পান। কাছে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, সেটির ভেতরে একটি নবজাতক রয়েছে।
শাহ জামাল জানান, প্রথমে শিশুটিকে মৃত ভেবেছিলেন। ঠান্ডার মধ্যেও শিশুটি নীরব ছিল। পরে নড়াচড়া টের পেয়ে দ্রুত শিশুটিকে নিরাপদে নিয়ে যান এবং ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে ইউএনও নাজমুল হুসাইন দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটিকে প্রশাসনের হেফাজতে নেন।
উদ্ধারের পরপরই নবজাতককে ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে শিশুটিকে সম্পূর্ণ সুস্থ ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। নবজাতক বিভাগের প্রধান ডা. এএসএম আবু তাহের জানান, শিশুটির শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক এবং কোনো জটিলতা নেই।
পরবর্তীতে শিশুটির সার্বক্ষণিক পরিচর্যার প্রয়োজন বিবেচনায় ইউএনও প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে শাহজালাল নামে এক যুবকের পরিবারের কাছে সাময়িকভাবে লালন-পালনের দায়িত্ব দেন। ওই পরিবার শিশুটিকে নিজ সন্তানের মতো করে আগলে রাখে।
শিশুটির দেখাশোনায় যুক্ত শাহ জামালের মা রিক্তা বেগম বলেন, “শিশুটি খুব শান্ত। তেমন কান্নাকাটি করে না। আল্লাহ এত মানুষের মধ্যে আমার বুকে এই শিশুটিকে দিয়ে ধন্য করেছেন।”
নবজাতকটির স্থায়ী ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ইউএনও নাজমুল হুসাইন আইনানুগ প্রক্রিয়ায় বৈধ অভিভাবক নির্ধারণের উদ্যোগ নেন। এ লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিশুটির কোনো বৈধ অভিভাবক না থাকায় তার সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনায় পরিবার ও সমাজজীবনে পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং পুনর্বাসনের জন্য উপযুক্ত অভিভাবক খোঁজা হচ্ছে।
আগ্রহী দম্পতিদের উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন জমা দিতে বলা হয়। আবেদনের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র, পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত এবং ছবি সংযুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর শিশুটিকে লালন-পালনে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রায় অর্ধশত দম্পতি আবেদন করেন। এরপর পুলিশি তদন্ত, আর্থিক সক্ষমতা, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাইসহ একাধিক ধাপে আবেদনকারীদের মূল্যায়ন করা হয়।
ইউএনও নাজমুল হুসাইন জানান, মৌখিক সাক্ষাৎ ও সার্বিক যাচাই-বাছাই শেষে শিশুর নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সক্ষম একটি পরিবারকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়।
শিশুটির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও সুখী জীবনের কথা বিবেচনা করে পরিবারটির পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।”
Leave a comment