ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মরিচালী গ্রামের তরুণ ইয়াসিন মিয়া শেখ। যার হাত ধরে একদিন ‘বাংলা ব্লকেড’-এ উত্তাল হয়েছিল রাজধানী, সেই ইয়াসিন এবার পৃথিবীর আরেক প্রান্তে যুদ্ধ করতে গিয়ে হারিয়ে গেলেন চিরতরে। রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ফ্যাসিস্টবিরোধী যুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জুলাইয়ের আন্দোলনের অগ্রভাগের এই তরুণ।
জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ রাশিয়ায় যুদ্ধে ইয়াসিন নিহত হন। পরিবার প্রথমে ১ এপ্রিল তার মৃত্যুসংবাদ জানতে পারে, তবে তার মরদেহের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পর অবশেষে পাওয়া গেছে ইয়াসিনের মরদেহ—রাশিয়ার রস্তু বন্ধন ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতালের হিমঘরে সংরক্ষিত অবস্থায়।
নিহতের বড় ভাই রুহুল আমিন শেখ জানান, মৃত্যুর খবর জানার পর থেকেই পরিবারের সদস্যরা লাশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার আবেদন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. মাজেদুর রহমান সরকার এক চিঠিতে জানিয়েছেন, কূটনৈতিক চ্যানেলে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। ইয়াসিনের মরদেহ শনাক্তকরণ ও দ্রুত দেশে পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আর দূরদেশে সন্তান হারিয়ে দিশেহারা মা ফিরোজা বেগম। বারবার ছেলের ছবি বুকে চেপে ধরে আহাজারি করে বলছেন, “তোমরা আমার ছেলেটারে এনে দাও। একবার দেখি আমার সোনা মানিকটা কেমন ঘুমিয়ে আছে!” কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ২৬ মার্চ ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল। তখনই জানিয়েছিল—“মা, টাকা পাঠাবো, ঘর বানাবো…”
ইয়াসিন মিয়া শেখ একসময় ঢাকা কলেজে পড়তেন। ২০২২ সালের ৭ জুলাই ছাত্র-জনতার সম্মিলিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ‘বাংলা ব্লকেড’-এর অগ্রভাগে ছিলেন। শহিদ আবু সাঈদের ছবি হাতে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে প্রত্যাবর্তনের সেই ছবি ভাইরাল হয়েছিল। ১০ আগস্ট শহিদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলনের কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন তিনি নিজেই।
পরবর্তীতে পরিবারের ইচ্ছায় জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমান রাশিয়ায়। কিন্তু এক সময়ের আন্দোলনের প্রেরণাদায়ী সে মুখটি এবার ফিরল না আর। শুধু একফালি ছবি আর একরাশ কান্না রেখে গেল গৌরীপুরের মরিচালী গ্রামে।
তার মৃত্যুতে এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গ্রামবাসীর একটাই দাবি—এই ‘জুলাই যোদ্ধা’-র মরদেহ যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয়, যাতে দেশের মাটিতে শেষবারের মতো তাকে বিদায় জানানো যায় সম্মানের সঙ্গে।
Leave a comment