রাশিয়ার ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের ১৪টি পোশাক কারখানার ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার আটকে আছে বলে জানিয়েছেন বিকেএমইএ (বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলো। তিনি বলেন, মূলত লেনদেন–সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক জটিলতার কারণেই রাশিয়ার ক্রেতারা এই অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না।
বুধবার (৭ মে) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত বিকেএমইএর ২০২৫-২৭ মেয়াদি পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানান হাতেম। তিনি জানান, শুরুতে চীনের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে কিছু অর্থ দেশে আনা সম্ভব হলেও পরে সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়।
এই সমস্যা সমাধানে বিকেএমইএ একটি প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার পাওনার বিপরীতে আটকে থাকা ৭৬ লাখ ডলার সমন্বয়ের সুযোগ তৈরির আহ্বান জানানো হয়েছে। বিকেএমইএ চায়, উভয় দেশের মধ্যে এমন একটি বিনিময় ব্যবস্থার সূচনা হোক, যাতে পোশাক কারখানাগুলোর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়।
ইশতেহার ঘোষণার সময় প্রগ্রেসিভ নিট অ্যালায়েন্সের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মনসুর আহমেদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তাঁরা সবাই এই নির্বাচনে প্রগ্রেসিভ নিট অ্যালায়েন্সের প্রার্থী।
এবারের নির্বাচনে ৫৮২ জন ভোটার ৩৫টি পদের জন্য ভোট দেবেন আগামী শনিবার, যা অনুষ্ঠিত হবে একযোগে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ৩৮ জন প্রার্থী, যার মধ্যে প্রগ্রেসিভ নিট অ্যালায়েন্স থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ৩৫ জন।
ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে এক প্রশ্নে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “কাঁচামাল আমদানিতে এখনও সরাসরি প্রভাব পড়েনি, তবে সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে সীমান্ত বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে তুলা ও সুতাসহ যেসব কাঁচামাল উভয় দেশ থেকে আসে, তার মূল্য বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে, যা আমাদের পোশাক শিল্পের জন্য আরেকটি চাপ তৈরি করবে।”
এছাড়া প্রগ্রেসিভ নিট অ্যালায়েন্সের ঘোষিত ১৫ দফা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে: কাস্টমস জটিলতা নিরসনে এনবিআরের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার উদ্যোগ, এইচএস কোড সমস্যার সমাধান, ভ্যাট-সংক্রান্ত হয়রানি রোধ, ব্যাংক খাতের জটিলতা নিরসন এবং ঢাকায় বিকেএমইএর নিজস্ব ভবন নির্মাণের অঙ্গীকার।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার অর্থ আটকে থাকায় যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো, সেখানে নতুন বিনিয়োগ ও উৎপাদন পরিকল্পনাও থমকে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান না হলে এটি দেশের সামগ্রিক রপ্তানি খাতেই প্রভাব ফেলতে পারে।
Leave a comment