মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা সরকার ও জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে চলমান সংঘর্ষে জান্তা বাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কিয়াও মিও আউং নিহত হয়েছেন। এই ঘটনা রাখাইনের বন্দরনগরী ক্যাউকফিউয়ের নিকটবর্তী এলাকায় সংঘটিত হয়, যা বর্তমানে কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক দিক থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, ক্যাউকফিউ-রাম্রি সড়কের পাশের প্যাইং সি কে গ্রামসংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষের সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও তার এক সহযোগী সেনা ক্যাপ্টেন স্নাইপার হামলায় গুলিবিদ্ধ হন। পরে জেনারেল কিয়াও মিও আউং মারা যান। তার মরদেহ বিশেষ একটি সামরিক উড়োজাহাজে রাজধানী ইয়াঙ্গুনে পাঠানো হয়েছে এবং পরে তাকে সেখানকার সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এই হামলার পর ক্যাউকফিউ শহরে সেনা উপস্থিতি জোরদার করা হয়েছে এবং আকাশপথ, নৌপথ ও স্থলপথে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে জান্তা সরকার। বিশেষ করে শহরটির গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলেছে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর অধীনে নির্মিত তেল ও গ্যাস পাইপলাইন এবং গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প। এসব অবকাঠামো রক্ষায় চীনের কিছু বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা সক্রিয় রয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে। জানা গেছে, এসব সংস্থা ড্রোনের মাধ্যমে জান্তা বাহিনীকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে, যদিও এসব দাবি এখনো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এএ সম্প্রতি অঞ্চলটির বিভিন্ন সেনা চৌকি ও পুলিশ ব্যাটালিয়ন দখল করে নিয়েছে এবং রাখাইনের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৪টির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা এখন রাখাইনের রাজধানী সিত্তে শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, জান্তা সরকারও পাল্টা আঘাত হানতে বিমান হামলা চালাচ্ছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে এএ নিয়ন্ত্রিত এলাকা ও সেসব এলাকার জনপদ। এতে ব্যাপক বেসামরিক প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলতি বছর এএ নিজেদের অভিযান রাখাইনের বাইরেও বিস্তৃত করে ম্যাগওয়ে, বাগো এবং আইয়ারাওয়াদি অঞ্চলে পৌঁছে দিয়েছে।
চীনা অর্থনৈতিক স্বার্থ ও জান্তা সরকারের নিরাপত্তা সমীকরণে ক্যাউকফিউ এখন এক বিস্ফোরক পরিস্থিতির মুখোমুখি। প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, সংঘর্ষের আশঙ্কায় শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন অনেক সরকারি কর্মকর্তা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এএ এবং সেনা সরকারের মধ্যে চলমান সংঘাত আরও তীব্র রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাখাইনের এ অস্থিরতা মিয়ানমার সংকটকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন মাত্রা দিতে পারে বলেও মত বিশ্লেষকদের। বিশেষত চীনের সরাসরি সম্পৃক্ততা এবং সামরিক উত্তেজনা অঞ্চলের ভৌগোলিক সংবেদনশীলতাকে আরও জটিল করে তুলছে।
Leave a comment