আসন্ন রমজান মাসকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি গড়ে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, চিনি, সয়াবিন তেল, ডালজাতীয় পণ্য, ছোলা, মটর ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও খেজুরের আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, যেখানে কিছু কিছু পণ্যের আমদানির প্রবৃদ্ধি ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ভোগ্যপণ্যের মোট আমদানি ছিল ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৩ টন, যা এবার বেড়ে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ টনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে চিনি আমদানি ২০ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, ডালজাতীয় পণ্য ৪৪ শতাংশ, ছোলা ৬৪ শতাংশ, মটর ডাল ৮৫ শতাংশ, রসুন ২০ শতাংশ, আদা ৫৬ শতাংশ এবং পেঁয়াজ ২ শতাংশ বেড়েছে। খেজুরের আমদানি গত বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত রমজানের তুলনায় বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারের রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে এবং মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এবার ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও আমদানি কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন, যা বাজারে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডলার সংকটের কারণে কিছুটা জটিলতা থাকলেও সরকারের সহায়তায় আমদানিকারকেরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পেরেছেন। ফলে বাজারে পণ্য সরবরাহ নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই।
সরকারও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের মাধ্যমে বাজার তদারকি জোরদার করা হয়েছে। পাইকারি বাজারেও সরবরাহ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো ব্যবসায়ী অযৌক্তিক মজুদ বা মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে। কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ ভোক্তাদের জন্য কম দামে ট্রাকে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির উদ্যোগও নিয়েছে, যা বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
সব মিলিয়ে বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এবার রমজানে পণ্যের সংকট দেখা দেবে না। আমদানি বৃদ্ধি, সরকারের সক্রিয় মনিটরিং এবং ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার ফলে ভোক্তারা স্বাভাবিক দামে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারবেন। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা ও আমদানি করা পণ্যের মজুদ ব্যবস্থাপনার ওপর নজর রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা, যাতে রমজানজুড়ে বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়।
Leave a comment