Home ধর্ম ও জীবন ইসলাম রমজানের প্রস্তুতি ও ফজিলত নিয়ে মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা
ইসলামধর্ম ও জীবন

রমজানের প্রস্তুতি ও ফজিলত নিয়ে মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা

Share
Share

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে রমজান মাসের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তিনি কয়েক মাস আগে থেকেই এ মাসের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। যখন রজব মাস শুরু হতো, তখনই তার অন্তরে রমজানের জন্য গভীর আগ্রহ জেগে উঠত। তিনি দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের রমজান পর্যন্ত জীবিত রেখো।’ (আদ-দুআ লিত তাবরানি, হাদিস : ৯১২)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) রজব মাস আসলে দোয়া করতেন: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করো এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।’ (তাবরানি ফিল আওসাত, হাদিস : ৪৭৭৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের হিসাব গুরুত্বের সঙ্গে রাখতেন এবং রমজানের চাঁদ দেখেই রোজা পালন করতেন। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে তিনি শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করতেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)
শাবান মাসে তিনি অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রমজান ছাড়া আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা রাখতে দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৬৯, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৫৬)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রমজান শুরু হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বন্দিদের মুক্তি দিতেন এবং অভাবীদের সাহায্য করতেন।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি, হাদিস : ৩৬৩৩)
তিনি বলতেন, ‘যখন রমজান শুরু হয়, আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯৮)
রমজানের গুরুত্ব বোঝাতে তিনি বলতেন, ‘এই মাসে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা দেয়—হে কল্যাণের অন্বেষণকারী! সামনে এগিয়ে আসো, আর হে মন্দের পথিক! বিরত হও। আল্লাহ রমজানের প্রতিটি রাতে বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৯৫)
রমজানের আগমনের আগে, বিশেষ করে শাবানের শেষ রাতে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের একত্র করতেন এবং খুতবা দিতেন। তিনি বলতেন,
‘হে মানুষ! এক মহান মাস তোমাদের ওপর ছায়া বিস্তার করছে—এটি অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ এ মাসের রোজাকে তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন এবং এর রাতের কিয়াম (তারাবি)-কে সুন্নত করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নফল ইবাদত করে, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করে, সে যেন অন্য সময় সত্তরটি ফরজ পালন করল। এটি ধৈর্যের মাস, যার প্রতিদান জান্নাত। এটি সহানুভূতির মাস এবং এমন একটি মাস যাতে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৬০৮)
তিনি আরও বলতেন, ‘এই মাসে যে ব্যক্তি তার কর্মচারী বা অধীনদের দায়িত্ব হালকা করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৬০৮)
রমজান মাসের বিশেষ মর্যাদার জন্য চাঁদ দেখার ক্ষেত্রেও শিথিলতা রাখা হয়েছে। সাধারণত চাঁদ দেখার জন্য দুই ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রয়োজন হয়, কিন্তু রমজানের জন্য একজন ব্যক্তির সাক্ষ্য দিলেই তা গ্রহণযোগ্য। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৩৪০-২৩৪১)
রমজান শুধু রোজা রাখার মাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, দানশীলতা এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে রমজানের প্রস্তুতি নিতে হয় এবং কীভাবে এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তের সদ্ব্যবহার করতে হয়।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

নেতানিয়াহুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সব ধরনের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক যোগাযোগ ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি...

পারমাণবিক বৈঠকের খবর অস্বীকার করলেন খাজা আসিফ

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ শনিবার দুপুরে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ সংস্থা ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ)-র কোনো জরুরি বৈঠক হয়নি...

Related Articles

আজ শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা: আধ্যাত্মিক জাগরণের মহিমান্বিত দিন

আজ রোববার, শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা।   দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এই...

কেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হয়

  ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বাক্যটির অর্থ, ‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে।’ যে...

‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে কিছু করা যাবে না: ইসলামী আন্দোলন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন,...

এবার সৌদি ও বাংলাদেশে একই দিনে ঈদ

প্রতিবছর সৌদি আরবের একদিন পর বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হলেও এবার সেই...