ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষের পর, গত কয়েকদিনের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি চরম বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েল গতকাল লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার ফলে অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছে এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছে। যুদ্ধবিরতির আওতায় আসার পরও এই হামলা নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। এই হামলার ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
লেবাননের সাথে ইসরায়েলের সীমান্তে গত এক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা ঘটে গতকাল। ইসরায়েলের বিমান বাহিনী জানায়, তারা শত্রু বাহিনীর লক্ষ্য শত্রুকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে, তবে লেবাননের কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে, এই হামলায় একাধিক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই হামলাকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ এবং ‘অবৈধ’ আক্রমণ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এই হামলার পূর্বে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে, একে অপরের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার কারণে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। যদিও হামাস এবং ইসরায়েল উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতির বিষয়টি মেনে চলতে সম্মত হয়েছিল, তারপরও ইসরায়েলি বাহিনীর এ ধরনের হামলা যুদ্ধের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
লেবানন ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে, দেশের সরকারী অবস্থা দুর্বল, অন্যদিকে হাজার হাজার শরণার্থী, বিশেষ করে সিরীয় শরণার্থী, লেবাননের নাগরিকদের জীবনযাত্রা আরও কঠিন করে তুলেছে। যুদ্ধবিরতি ভেঙে এই হামলা লেবাননকে আরও মানবিক সংকটে ফেলেছে। আহতদের অধিকাংশই বেসামরিক মানুষ এবং হাসপাতালগুলিতে তাদের চিকিৎসা চলছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল-লেবানন সম্পর্কের এই নতুন উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যে আরও এক ধাপ সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পরিচালক মারি ডেভিস বলেন, “এই ধরনের হামলা শুধুমাত্র আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করবে, এটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির মধ্যে সম্পর্কের আরো জটিলতা তৈরি করবে। ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের ইতিহাস রয়েছে, তবে এই হামলা সেই দ্বন্দ্বের নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে।”
বর্তমান পরিস্থিতি লেবানন এবং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধবিরতির ভেঙে যাওয়া, নতুন করে হামলা এবং এর পরিণতি শুধুমাত্র উভয় পক্ষের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় অবিলম্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক সাহায্যের উপর জোর দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Leave a comment