২৪ মার্চ দুই দিনের বাংলাদেশ সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক কমান্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল পি ভাওয়েল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন। আলোচনায় সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, মহড়া এবং সামগ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো কেন্দ্রীভূত করা হয়।
পূর্বের বহু পর্যায়ে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতার ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে, দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও কৌশলগত সমঝোতার ভিত্তিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের উৎপাদিত সমরাস্ত্র সরঞ্জাম বাংলাদেশে বিক্রি করার সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশ সফরের সময় লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল ভাওয়েল বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
বৈঠকে ,যুক্তরাষ্ট্র তাদের উৎপাদিত উন্নতমানের সমরাস্ত্র সরঞ্জাম, যা সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা সম্পন্ন, তা বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে সরবরাহের মাধ্যমে সামরিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করেছে । দুর্যোগ মোকাবিলা ও জটিল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর অবদান এবং এ জাতীয় কার্যক্রমকে সম্মান জানিয়ে, দুই দেশের মধ্যে চলমান সহযোগিতা এবং নিরাপত্তা স্বার্থকে বর্ধিত করার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। আগামী গ্রীষ্মে অনুষ্ঠিতব্য ‘টাইগার লাইটনিং’ সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে, দুই পক্ষ সামরিক কৌশল এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও পারস্পরিক দক্ষতা বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল পি ভাওয়েল ২৫ মার্চ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁরা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যকার সক্ষমতা বৃদ্ধির বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এর পাশাপাশি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল পি ভাওয়েল বর্তমানে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার এ মোতায়েনরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের পেশাদারত্ব ও বিভিন্ন কার্যক্রমেরও প্রশংসা করেন।
এদিকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসানের সঙ্গে একই দিনে দেখা করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল ভোয়েল। এএফডির এক্সে জানানো হয়েছে, আলোচনার সময় তাঁরা দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিভিন্ন দিকসহ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক কমান্ডের মধ্যে প্রশিক্ষণ, মহড়া এবং সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাব দুই দেশের মধ্যে কেবল সামরিক সম্পর্কের উন্নয়নই ঘটাবে না, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোতে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। বর্তমানে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী প্রায় ১৭০,০০০ সদস্যসহ, আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই বৈঠকে আলোচনা করা পদক্ষেপগুলো যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে সামরিক সরঞ্জামের আধুনিকীকরণ ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে যেখানে সামরিক সরঞ্জামের আধুনিকীকরণ, প্রশিক্ষণ ও মহড়ার আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা আরও সুদৃঢ় হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত সহযোগিতা ও সরঞ্জাম সরবরাহ কেবলমাত্র সামরিক দিকেই নয়, বরং দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা নীতি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ।
Leave a comment