পাল্টা শুল্কের চাপ মোকাবিলা করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বছরের প্রথম ছয় মাসে টি-শার্ট রপ্তানিতে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস ও চীনের মতো দীর্ঘদিনের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশকে পেছনে ফেলে এই সাফল্য অর্জন করল দেশের তৈরি পোশাক খাত। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশটি ১১৭টি দেশ থেকে মোট ৩৫২ কোটি মার্কিন ডলারের টি-শার্ট আমদানি করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ একাই রপ্তানি করেছে ৩৭ কোটি ৩২ লাখ ডলারের পণ্য। গত বছর একই সময়ে শীর্ষে থাকা নিকারাগুয়ার রপ্তানি ছিল ৩৬ কোটি ১২ লাখ ডলার।
৩৬ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের টি-শার্ট আমদানির তালিকার শীর্ষে নাম লেখাল বাংলাদেশ। ১৯৮৯ সাল থেকে হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, হংকং, জ্যামাইকা, মেক্সিকো ও চীন এই বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল। চলতি বছরের ২ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সব দেশের পণ্যের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। এর ফলে আগে শুল্ক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশগুলো, বিশেষত নিকারাগুয়া ও হন্ডুরাসকেও অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হয়। প্রথম ধাপের এই পরিবর্তনে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান জোরদার হয়।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানিয়েছেন, বছরের প্রথমার্ধে এই অর্জন আশাব্যঞ্জক হলেও ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া নতুন পাল্টা শুল্কের কারণে অবস্থান ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তার মতে, বৈশ্বিক চাহিদা কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি নেতিবাচক প্রভাবের মুখে পড়তে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ, যা ভিয়েতনামের সমান এবং ভারত (৫০ শতাংশ) ও চীন (৩০ শতাংশ)-এর চেয়ে কম। নিকারাগুয়ার শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ১৮ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশটিতে মোট ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার বড় অংশই তৈরি পোশাক। শুধু টি-শার্ট রপ্তানির গড় দাম ছিল প্রতি পিস ১ ডলার ৭৬ সেন্ট, যা চীন, নিকারাগুয়া ও পাকিস্তানের তুলনায় বেশি হলেও ভিয়েতনাম, হন্ডুরাস ও ভারতের তুলনায় কিছুটা কম।
গত অর্থবছরে বিশ্বের ১৫৮টি দেশে ৭৪৫ কোটি ডলারের টি-শার্ট রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছিল তৃতীয় বৃহত্তম গন্তব্য। রপ্তানিকারকদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সাভারের জিএবি লিমিটেড, যারা একাই ১৫ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের টি-শার্ট যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। এ ছাড়া এসডিএস ইন্টারন্যাশনাল, আয়েশা ক্লথিং, নিট এশিয়া, ডিভাইন ইনটিমেটসসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক দাম, উৎপাদন দক্ষতা এবং কৌশলগত বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশের টি-শার্ট রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তবে পাল্টা শুল্ক ও বৈশ্বিক চাহিদার ওঠানামা আগামী মাসগুলোতে এই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Leave a comment