ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা শুধু কথার প্রতিশ্রুতি হলে হবে না, এই নিরাপত্তার গ্যারান্টি অবশ্যই আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। চলমান যুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এমন আইনি প্রতিশ্রুতি ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার কিয়েভে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জেলেনস্কি জানান, ইউরোপের কিছু দেশ এখনো নিশ্চিত নয় যে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা কিংবা যুদ্ধ সমাপ্তির কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কতটা দৃঢ় নেতৃত্ব দিতে পারে। তার দাবি, সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক আলোচনাগুলোয় এই প্রশ্ন আরও জোরালোভাবে সামনে এসেছে।
কিয়েভে সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি আরও বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তিনি জানান, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কিনতে ইউক্রেনের অন্তত ৮০০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। সামরিক সহায়তা অব্যাহত না থাকলে যুদ্ধক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে ইউক্রেনের।
এদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্টজ জেলেনস্কির সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে চলমান যুদ্ধ, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা কাঠামো, অস্ত্র সহায়তা এবং নতুন কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
বৈঠক শেষে জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্টজ সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিরাপত্তা প্রস্তাবের “কিছু অংশ নিয়ে সন্দেহ” রয়েছে তার। তিনি বলেন, ইউরোপকে খুব সতর্ক হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—কারণ ইউক্রেনের নিরাপত্তা শুধু ইউরোপের নিরাপত্তাই নয়, এটি ন্যাটো জোটের সার্বিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে জড়িত।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের অবস্থানকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বিত করা। তার মতে, একত্রে কাজ না করলে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় পশ্চিমা জোটের অবস্থান দুর্বল হবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টার্মারও ইউক্রেনের প্রতি ব্রিটেনের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। তিনি জানান, ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ইউরোপীয় দেশগুলোকে আরও সমন্বিত ও শক্ত অবস্থান নিতে হবে।
একজন জ্যেষ্ঠ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, আলোচনায় সবচেয়ে জটিল বিষয় হলো ভূখণ্ড। রাশিয়া এখনো দাবি করছে, দোনবাসসহ কিছু অঞ্চল পুরোপুরি ছাড়তে হবে ইউক্রেনকে। কিন্তু কিয়েভ বহুবার বলেছে, তারা এসব দাবি কখনোই মেনে নেবে না।
উল্লেখ্য, রাশিয়া আগেও বহুবার দাবি করেছে যে দোনবাস অঞ্চলসহ কিছু ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকা উচিত। এ বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলো সাধারণত কিয়েভকে সমর্থন করে এসেছে। তবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় এবং আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ায় আলোচনার টেবিলে নতুন সমঝোতার সুযোগ তৈরি হতে পারে—এমন ধারণাও রয়েছে কূটনৈতিক মহলে।
জেলেনস্কি বলেন, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি আইনগত নিরাপত্তা কাঠামো পাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধ শেষ হলেও রাশিয়ার আগ্রাসনের সম্ভাবনা পুরোপুরি উধাও হয়ে যাবে না—তাই দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শক্ত আইনি প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।
সূত্র: এএফপি, সিএনএন
Leave a comment