নিখোঁজ হওয়ার ছয় দিন পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী স্নেহা দেবনাথের মরদেহ যমুনা নদী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় উত্তর দিল্লির গীতা কলোনি ফ্লাইওভারের কাছে নদীতে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। মরদেহ শনাক্ত করেছেন স্নেহার পরিবারের সদস্যরা।
স্নেহা দেবনাথের বয়স ১৯ বছর। তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বাসিন্দা হলেও পড়াশোনার জন্য দক্ষিণ দিল্লির পরিবেশন কমপ্লেক্স এলাকায় বসবাস করছিলেন। আত্মারাম সনাতন ধর্ম কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ৭ জুলাই সকালে পরিবারের সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেন স্নেহা। সকাল ৫টা ৫৬ মিনিটে তিনি ফোনে জানান, বন্ধুর সঙ্গে সরাই রোহিলা রেলস্টেশনে যাচ্ছেন। এরপর থেকেই তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নিখোঁজ হওয়ার পরপরই উদ্বিগ্ন হয়ে খোঁজ শুরু করেন স্নেহার পরিবারের সদস্যরা। তারা যোগাযোগ করেন সেই বন্ধুর সঙ্গেও, যাকে ফোনে স্নেহা উল্লেখ করেছিলেন। তবে বন্ধু জানান, ওইদিন তার সঙ্গে দেখা হয়নি। পরে তদন্তে স্নেহার বাসা থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। চিরকুটে লেখা ছিল, তিনি সিগনেচার ব্রিজ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন।
চিঠিতে স্নেহা লেখেন, “আমি কেবল ব্যর্থতা এবং বোঝা মনে করছি নিজেকে। এইভাবে বাঁচা আর সহ্য হচ্ছিল না। আমি সিগনেচার ব্রিজ থেকে লাফিয়ে আমার জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে কোনো ভুল নেই, এটা আমার নিজের সিদ্ধান্ত।”
চিঠির সূত্র ধরে সিগনেচার ব্রিজের আশপাশে অভিযান শুরু করে দিল্লি পুলিশ ও জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (NDRF)। তবে প্রথমদিকে নজরদারির স্বল্পতা ও তথ্যের অভাবে তল্লাশিতে অগ্রগতি হয়নি। ৯ জুলাই থেকে শুরু হয় নদীতে যৌথ অভিযান।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার কার্যালয় দিল্লি পুলিশকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেয়। ত্রিপুরা পুলিশও পরে এই তদন্তে যুক্ত হয় এবং দিল্লি পুলিশের সহযোগিতা চায়।
অবশেষে নিখোঁজের ছয় দিন পর গতকাল স্নেহার মরদেহ যমুনা নদী থেকে উদ্ধার হয়। তার মরদেহ পাঠানো হয়েছে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, মানসিক চাপ ও পারিবারিক সমস্যা থেকেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্নেহা। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। স্নেহার মৃত্যুর ঘটনাটি দিল্লি শহরে তরুণদের মানসিক চাপ ও আত্মহত্যা প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
Leave a comment