রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে মো. রাসেল (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। শনিবার (১ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে নবীনগর হাউসিং এলাকার ৪ নম্বর রোডে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। পুলিশ জানায়, নিহত রাসেল পেশায় একজন মাইক্রোবাসচালক ছিলেন। তিনি মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা মডেল টাউনের ৫ নম্বর রোডের ২০/এ নম্বর বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ বসবাস করতেন।
স্থানীয়রা জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাসেল ও তার পরিচিত বিপ্লব নবীনগর হাউসিংয়ের একটি দোকানের সামনে ভ্যানে বসেছিলেন। এ সময় কয়েকজন যুবক হঠাৎ এসে তাদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় রাসেলকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিপ্লব বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সবজি বিক্রেতা শাহিন বলেন, “আমি ভ্যানগাড়িতে সবজি বিক্রি করছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখি এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে আমি ও পাশের দোকানদার তাইজুল তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসক জানান, সে মারা গেছে। কে বা কারা কুপিয়েছে, আমরা জানি না।”
মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শহিদুল ওসমান মাসুম জানান, “প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, চন্দ্রিমা বাজারের পাশে মুরগির দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে পেপার বাবু ও বিপ্লবের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। শনিবার রাতে সেই বিরোধের জেরে হামলার ঘটনা ঘটে।” পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে এবং প্রাথমিক তদন্তে জড়িত সন্দেহে পেপার বাবু ও মোবারক নামে দুইজনকে আটক করেছে।
এসআই মাসুম বলেন, “ঘটনার পরপরই আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। আটক দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দোকান বসানো নিয়ে পুরোনো দ্বন্দ্ব থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।”
নিহত রাসেলের ছোট ভাই মনির হোসেন বলেন, “আমার ভাই নিরীহ মানুষ ছিল। সে শুধু বন্ধুর সঙ্গে বসেছিল, কোনো বিরোধে জড়িত ছিল না। আমরা ন্যায়বিচার চাই।” ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই দাবি করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে নবীনগর হাউসিং এলাকার আশপাশে দোকান দখল ও বসানোকে কেন্দ্র করে কয়েকটি গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ হোসেন বলেন, “এলাকায় দোকান বসানো নিয়ে কয়েক মাস ধরেই উত্তেজনা চলছিল। মাঝে মাঝে ঝগড়া, হাতাহাতিও হতো। কিন্তু কেউ ভাবেনি বিষয়টা খুন পর্যন্ত গড়াবে।” রাসেলের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং মামলার প্রস্তুতি চলছে।
Leave a comment