পরিবারের দারিদ্র্য দূর করে স্বচ্ছল জীবনের স্বপ্ন নিয়ে সাত বছর আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার যুবক কবির হোসেন। কঠোর পরিশ্রম আর দীর্ঘ প্রবাস জীবনের কষ্ট সহ্য করে স্ত্রী ও সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর যে স্বপ্ন তিনি লালন করেছিলেন, তা আর বাস্তবায়ন হলো না। মালয়েশিয়ার চামান্ডা উতিরাম এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয়েছেন তিনি। এই মর্মান্তিক খবর দেশে পৌঁছানোর পর থেকেই কবির হোসেনের বাড়িতে চলছে হৃদয়বিদারক আহাজারি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কবির হোসেন মালয়েশিয়ার একটি শিল্পকারখানায় ‘কেসেল’ গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালে জীবিকার তাগিদে তিনি দেশ ছাড়েন। প্রবাসে দীর্ঘ সময় ধরে কঠিন দায়িত্ব পালন করে তিনি পরিবারকে নিয়মিত অর্থ পাঠাতেন। প্রায় দুই বছর আগে ছুটিতে দেশে এসে স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের সঙ্গে কিছুদিন সময় কাটান। এরপর আবার কর্মস্থলে ফিরে যান। পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য অনুযায়ী, আগামী ১ জানুয়ারি তার দেশে ফেরার কথা ছিল। সে প্রস্তুতিও চলছিল। স্ত্রী ও একমাত্র ছেলের জন্য উপহার কেনার পরিকল্পনাও করেছিলেন তিনি।
কিন্তু সেই অপেক্ষার অবসান আর হলো না। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতের কোনো এক সময় মালয়েশিয়ার কেসেল কারখানার দ্বিতীয় গেটে দায়িত্ব পালনকালে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন কবির হোসেন। হামলার ধরন সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত জানা না গেলেও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর পৌঁছালে মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে স্বজনরা।
নিহত কবির হোসেন নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কয়রাগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্ত্রী শিউলী বেগম ও একমাত্র ছেলে সোহান হোসেনকে রেখে গেছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি তারা।
নিহতের ছেলে সোহান হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার বাবা খুব শিগগিরই বাড়ি ফেরার কথা ছিল। আমরা সবাই অনেক আশায় ছিলাম। কিন্তু ডিউটিরত অবস্থায় কে বা কারা আমার বাবাকে খুন করেছে। কেন আমার বাবাকে হত্যা করা হলো, আমি তার বিচার চাই। সরকারের কাছে অনুরোধ—আমার বাবার লাশ যেন দ্রুত দেশে পাঠানো হয়।”
স্ত্রী শিউলী বেগম বলেন, “আমার স্বামীর কত স্বপ্ন ছিল । ঘটনার দিন রাত ৯টার দিকে আমাকে ফোন করেছিলেন। তখন আমি অসুস্থ থাকায় ঠিকমতো কথা বলতে পারিনি। ব্যথা কমলে ফোন দিতে বলেছিলেন। পরে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। কে আমার স্বামীকে মারলো, কেন মারলো—আমি এর বিচার চাই।”
এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনও শোক প্রকাশ করেছে। বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “আমরা এই ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। নিহতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যেকোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন শোকাহত পরিবারের পাশে থাকবে।” তিনি জানান, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।
Leave a comment