মানুষের দাঁত প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় গজানোর সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে চলেছে জাপানের বিজ্ঞানীরা। নতুন এক যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার করে তার মানব পরীক্ষা শুরু করেছেন তারা, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ওষুধটির নাম TRG-035। এটি মানবদেহে দাঁতের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী USAG-1 নামের এক প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে, ফলে নতুন দাঁতের অঙ্কুরোদ্গম ঘটে।
জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শুরু হয়েছে এই ওষুধের প্রথম ধাপের মানব পরীক্ষা। পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৩০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী এমন ৩০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি, যাদের অন্তত একটি দাঁত নেই। এই পর্যায়ে মূলত ওষুধটির নিরাপত্তা যাচাই করা হচ্ছে। সফল হলে পরবর্তী ধাপে congenitally tooth agenesis–এ আক্রান্ত শিশুদের ওপর পরীক্ষা চালানো হবে; এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের দুধ ও স্থায়ী দাঁত স্বাভাবিকভাবে গজায় না।
এর আগেও এই ওষুধের প্রাণীতে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। মাউস ও ফেরেটের ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, TRG-035 নতুন দাঁতের অঙ্কুর তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং তা পূর্ণ দাঁতে পরিণত হয়েছে। এই সাফল্যই মানব পরীক্ষার পথে উৎসাহ যুগিয়েছে বিজ্ঞানীদের।
বিজ্ঞানীদের আশাবাদ, সব ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন হলে ২০৩০ সালের মধ্যেই এই ওষুধ বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আনা সম্ভব হবে। এতে করে দাঁত হারানো মানুষদের আর কৃত্রিম ইমপ্লান্ট বা ডেনচারের ওপর নির্ভর করতে হবে না, বরং প্রাকৃতিকভাবে নতুন দাঁত গজানো সম্ভব হবে। চিকিৎসাবিদরা বলছেন, এই ওষুধ দাঁত চিকিৎসায় এক বিপ্লব ডেকে আনবে এবং তা কেবল সৌন্দর্য নয়, বরং স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ দাঁত হারিয়ে পড়েন নানা সমস্যায়—খাবার গ্রহণে কষ্ট, আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি, উচ্চমূল্যের ইমপ্লান্ট ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার বোঝা। সেখানে জাপানি গবেষকদের এই আবিষ্কার হতে পারে সহজ, নিরাপদ এবং স্বল্পমূল্যের একটি প্রাকৃতিক বিকল্প। তবে ওষুধটি বাজারে আসার আগে আরও কয়েক বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নীতিগত অনুমোদনের প্রক্রিয়া পাড়ি দিতে হবে।
গবেষণা দলের প্রধান ডা. কাসাহারা হিরোইসি জানিয়েছেন, “আমরা শুধু দাঁতের পুনরুজ্জীবন চাই না, আমরা চাই এটি মানুষের প্রাকৃতিক অধিকার হয়ে উঠুক।” এ কথার মধ্য দিয়েই তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের নতুন এক যুগের সূচনা হতে চলেছে, যেখানে শরীর নিজের অঙ্গ নিজেই ফিরিয়ে পেতে সক্ষম হবে।
মানুষের দাঁত পুনঃগজানোর স্বপ্ন বহু পুরনো। বহু কল্পবিজ্ঞান কাহিনিতেও এই সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। এবার সে স্বপ্ন বাস্তবের মুখোমুখি—জাপানি বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায়।
Leave a comment