বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গুমের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি পৃথক মামলায় ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন র্যাব, বিজিবি ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার এর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনাল যে ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৪ জন বর্তমানে কর্মরত এবং একজন অবসরকালীন ছুটিতে আছেন।
তাদের নাম:
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম
• ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ
• কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন
• কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে)
• লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক
• লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন
• লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম
• লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম
• মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম, বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা
• মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক
ট্রাইব্যুনালের এই গুরুত্বপূর্ণ আদেশ ঘিরে বুধবার ভোর থেকেই রাজধানী ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সকাল ৬টার দিকেই ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও এপিবিএন সদস্যদের উপস্থিতিতে পুরো ট্রাইব্যুনাল এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। পাশাপাশি কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, কাকরাইল মোড়সহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী, আনসার ও পুলিশ সদস্যদের টহল জোরদার করা হয়।সূত্র জানায়, এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুম, বেআইনি আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনটি পৃথক মামলা করা হয়েছে।
এসব মামলার তদন্ত দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। প্রাথমিক প্রমাণ-প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল বুধবার অভিযুক্তদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মামলাগুলো মূলত ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সংঘটিত একাধিক গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেছে, মামলার প্রমাণাদি পর্যাপ্ত হওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরাসরি বিচার কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
আদেশে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার বলেন—“মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের গুরুত্ব অপরিসীম। অভিযুক্তরা দেশের শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হওয়ায় তদন্ত প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আদালত আইন অনুযায়ী সকল পক্ষকে সমান সুযোগ দেবে, এবং প্রমাণের ভিত্তিতেই বিচার সম্পন্ন হবে। আইনজীবীরা বলছেন, এই আদেশ বাংলাদেশের বিচার ইতিহাসে সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
Leave a comment