যেন মাদকের হাট বসেছে ‘বাউফলে’ ! শহর থেকে গ্রামে হাত বাড়ালেই মিলছে গাঁজা, ইয়াবাসহ নানা ধরণের মাদকদ্রব্য। প্রকাশ্যেই চলছে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন । দেদারসে চলছে বেচাকেনা, জমজমাট হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসা। আর এই ব্যবসার ছোঁয়ায় রাতারাতি লাখপতি বনে গেছেন অনেকে।
জানা গেছে, পুরো উপজেলায় কয়েকশ স্পটে নির্দ্বিধায় চলছে মাদক সেবন ও বিক্রি। এসবের মধ্যে রয়েছে পৌর শহরের পাবলিক মাঠ, বাংলা বাজার, নতুন বাজার, বয়রা পট্টি, মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম, সরকারি কলেজ, নবারুণ ইন্সটিটিউট ক্যাম্পাস, কাগুজিরপুল, গার্লস স্কুল রোড, ফুলতলা, কালীবাড়ি ও হাসপাতালের অপজিটের ব্যাটারি গলি।
ধুলিয়া ইউনিয়নের ধুলিয়া লঞ্চঘাট, স্কুল, মঠ বাড়িয়া চৌরাস্তা, জামাল কাঠি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁদকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কালিশুরী, নাজিরপুর, কালাইয়া, মদনপুরা, কনকদিয়া, দাশপাড়া, নওমালা, আদাবাড়িয়া, বগা ও কেশবপুর প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে একাধিক স্পট।
বিশেষ করে বর্তমানে ইয়াবা ও গাঁজার ‘হটস্পট’ হিসেবে পরিচিত বাউফল পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাংলা বাজার, নতুন বাজার ও বয়রা পট্টি । এ এলাকায় রয়েছে দৃশ্যমান মাদক ব্যবসায়ীদের নিজস্ব দোকান বা আড়ালে পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যা স্থানীয়দের চোখে অনেকটাই স্পষ্ট।
পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনার জন্য ওই এলাকায় ঢুকলেই আগেই খবর পৌঁছে যায় মাদক সরবরাহকারীদের কাছে। ফলে তারা আগেভাগেই নিরাপদে সরে পড়ে অথবা গোপনে মজুদ করে ফেলে মালামাল। এতে একদিকে যেমন প্রশাসনের গাফিলতি স্পষ্ট, অন্যদিকে ওই এলাকার যুব সমাজ মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
উপজেলায় প্রধান চারটি রুট দিয়ে মাদকের চালান আসে। গাঁজার চালানের অন্যতম প্রধান রুট ঢাকা-কালাইয়া নৌ রুট। ঢাকা সদরঘাট, ফতুল্লা ও চাঁদপুর থেকে লঞ্চ-যোগে আসে গাঁজা। এসব চালান শেষ রাতে ধুলিয়া, নিমদী ও কালাইয়া লঞ্চঘাট থেকে চলে যায় বিভিন্ন মাদক স্পটে।
এছাড়াও সড়ক পথে বরিশাল থেকে ভাতশালা হয়ে কালিশুরীর পথে, দুমকি থেকে বগা ও পটুয়াখালীর লোহালিয়া থেকে বাউফলে মাদকের চালান আসে। মাদকের চালান চলে প্রথমে চলে যায় কারবারিদের হাতে। দ্বিতীয় ধাপে চলে যায় মাদক সেবনকারীদের হাতে। বিভিন্ন কৌশলে চলে মাদকের খুচরা বিক্রি। মোবাইল কল, হোম ডেলিভারি ও হাতে হাতে হয় কেনা-বেচা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাদকসেবীদের বক্তব্য অনুযায়ী, ২৫ গ্রাম গাঁজা বিক্রি হয় ১ হাজার টাকায়, আর একটি ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি হয় ৩-৪শ টাকায়। চাহিদার শীর্ষে রয়েছে উঠতি বয়সী তরুণ ও যুবকরা, তবে মাদকসেবীদের তালিকায় অংশ গ্রহণ বাড়ছে নারীদেরও ।
সচেতন মহল মনে করছে, প্রশাসনের একাংশ ও কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের ছত্রছায়া ছাড়া এত বড় মাদক নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠা সম্ভব নয়।
বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, “বাউফল উপজেলায় মাদক নির্মূলে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের কাছে কোনও তথ্য এলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি রয়েছে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ
Leave a comment