সৌদি আরবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা একটি টুইটের জেরে এক ব্রিটিশ নাগরিককে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। ৪১ বছর বয়সী আহমেদ আল-দুশকে ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট সৌদি আরবের কিং খালিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়, যখন তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
আহমেদের স্ত্রী আমাহের নূর জানান, তিনি এবং তাদের চার সন্তানের জন্য এটি এক ‘দুঃস্বপ্নে’র মতো। আহমেদ যখন গ্রেপ্তার হন, তখন আমাহের গর্ভবতী ছিলেন এবং সন্তান প্রসবের সময় স্বামীকে পাশে পাননি। পাঁচ মাস পর মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ‘ভুয়া, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সামাজিক মাধ্যমে প্রচার’ করা। যদিও পরিবারটির ধারণা, এসব অভিযোগ ২০১৮ সালে করা একটি টুইটকে ঘিরে, যেখানে সৌদি আরবের নাম পর্যন্ত ছিল না—উক্ত টুইটটি পরে মুছে ফেলা হয়েছিল এবং সেটির ফলোয়ার ছিল মাত্র ৪১ জন।
আহমেদের স্ত্রী বলেন, “যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে আহমেদ হয়তো শুধু বিদেশে আটক আরেকজন নাগরিক, কিন্তু আমাদের পরিবারের কাছে সে সবকিছু। আমরা এখনো জানি না, কী কারণে তাকে এমন শাস্তি দেওয়া হলো। আট মাস ধরে আমরা যে অনিশ্চয়তায় দিন পার করছি, তা যেন শেষ হওয়ার কোনো নাম নেই। এতে আমাদের মানসিক যন্ত্রণা আরও গভীর হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, রায় ঘোষণার আগেই আহমেদের পিঠ ও থাইরয়েড সমস্যার কারণে শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। এছাড়া মানসিক অবস্থাও দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছিল। এখন ১০ বছরের কারাদণ্ড জানার পর তিনি কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা কল্পনা করাও কঠিন।
গ্রেপ্তারের পর দুই মাস ধরে পরিবারটির আহমেদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না এবং তার অবস্থান বা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোনো তথ্যও তাদের জানানো হয়নি। পরে আইনজীবীর উপস্থিতি ছাড়াই আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তাও তিনি জানতে পারেননি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
স্ত্রী আমাহের বলেন, “সে এখন পরিবারের পাশে নয়, বরং দ্বিতীয় হাতের সিগারেটের ধোঁয়ায় ভরা একটি ঘিঞ্জি কারাগারে। এটি শুধু আমার স্বামীর নয়, যুক্তরাজ্য সরকারের ব্যর্থতারও একটি করুণ উদাহরণ। আমাদের সন্তানদের তাদের বাবাকে দরকার। আহমেদ কোনো অপরাধ করেনি।”
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন এবং প্রবাসী নাগরিকদের নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। পরিবারের দাবি, এখন সময় এসেছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার, যাতে নিরপরাধ একজন মানুষ মুক্তি পায় এবং তার পরিবার পুনরায় একত্র হতে পারে।
Leave a comment