হলিউডে এমন অনেক তারকা আছেন যারা অল্প বয়সে খ্যাতি ও সম্পদ অর্জন করেছেন। তবে শিশু বয়সেই মিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠার বিরল উদাহরণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলেন- ম্যাকলেই কালকিন। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি হলিউডের অন্যতম ধনী শিশু অভিনেতা হয়ে ওঠেন, আর এর মূল কারণ ছিল তার অভিনীত বিখ্যাত সিনেমা ‘হোম অ্যালোন’।
১৯৯০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হোম অ্যালোন’ সিনেমাটি বিশ্বজুড়ে দর্শকদের হৃদয় জয় করে নেয়। কমেডি ও পারিবারিক নাটকের অনন্য মিশেলে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে ম্যাকলেই কালকিনের চরিত্র “কেভিন ম্যাককালিস্টার” তৎকালীন সময়ের অন্যতম স্মরণীয় শিশু চরিত্রে পরিণত হয়। সিনেমাটি শুধু বক্স অফিসেই সাফল্য পায়নি, বরং তাকে রাতারাতি বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দেয়। প্রথম সিনেমার জন্য কালকিন পেয়েছিলেন ১ লাখ মার্কিন ডলার, যা বর্তমান মানে প্রায় ১২ কোটি টাকার সমান।
সিনেমার অভূতপূর্ব সাফল্যের পর ১৯৯২ সালে মুক্তি পায় এর সিক্যুয়েল ‘হোম অ্যালোন টু: লস্ট ইন নিউ ইয়র্ক’। দ্বিতীয় কিস্তিতে কালকিনের পারিশ্রমিক আরও বেড়ে যায়। তিনি শুধু নির্দিষ্ট সম্মানীই পাননি, বরং সিনেমার মোট আয়ের ৫ শতাংশ এবং পণ্য বিক্রির ১৫ শতাংশ রয়্যালটি পান। এই আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ‘হোম অ্যালোন টু’ বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৫৯ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল, যা তার ক্যারিয়ার ও আর্থিক সাফল্যের ভিত্তি আরও মজবুত করে।
সম্প্রতি ‘হট ওয়ানস’ শোতে অংশ নিয়ে ম্যাকলেই কালকিন নিজের আর্থিক সাফল্যের কিছু তথ্য শেয়ার করেন। তিনি বলেন, “আমি তখন শিশু ছিলাম, তাই এই বিপুল অঙ্কের অর্থের গুরুত্ব পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। তবে আমার পরিবার ও এজেন্টরা ভালোভাবে বিনিয়োগ করেছিল, যার সুফল আমি আজও পাচ্ছি।”
শুধু ‘হোম অ্যালোন’ নয়, ১৯৯১ সালের ‘মাই গার্ল’ সিনেমা থেকে কালকিন উপার্জন করেন ১ মিলিয়ন ডলার। পরবর্তী সময়ে ‘গেটিং ইভেন উইথ ড্যাড’ ও ‘রিচি রিচ’ সিনেমা থেকে তার আয় ছিল প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার। একের পর এক বাণিজ্যিকভাবে সফল চলচ্চিত্র তাকে শিশু বয়সেই শীর্ষ আয়কারী অভিনেতাদের কাতারে নিয়ে আসে।
তবে ১৪ বছর বয়সে ম্যাকলেই কালকিন অভিনয় থেকে বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। খ্যাতি ও কাজের চাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে তিনি পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত জীবনে মনোযোগী হন। দীর্ঘ বিরতির পরও তার আয় বন্ধ হয়নি। পুরোনো সিনেমাগুলোর স্বত্ব, টেলিভিশন সম্প্রচার, ডিভিডি বিক্রি ও মার্চেন্ডাইজ থেকে তিনি নিয়মিত রয়্যালটি পান।
বিশ্বখ্যাত ওয়েবসাইট ‘সেলিব্রিটি নেট ওয়ার্থ’-এর তথ্যমতে, বর্তমানে ম্যাকলেই কালকিনের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২১৮ কোটি টাকার বেশি। শিশু বয়সে অর্জিত খ্যাতি ও সম্পদ ধরে রাখতে তার বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ আর্থিক পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ম্যাকলেই কালকিনের সাফল্য শুধুমাত্র ‘অভিনয় প্রতিভার’ ফল নয়, বরং এটি একটি উদাহরণ—কিভাবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও চুক্তি একজন শিল্পীর জীবন বদলে দিতে পারে। রয়্যালটি ভিত্তিক আয় এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ ব্যবস্থাপনা তাকে তিন দশক পরও সমৃদ্ধ রেখেছে।
কালকিন মাঝেমধ্যে অভিনয় ও প্রযোজনায় যুক্ত হন। এছাড়া তিনি সৃজনশীল প্রকল্প, পডকাস্ট এবং ব্যক্তিগত বিনোদনমূলক কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছেন। যদিও শিশুবেলার মতো নিয়মিত বড় পর্দায় উপস্থিতি নেই তার।
৩৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ‘হোম অ্যালোন’-এর সাফল্য ও ম্যাকলেই কালকিনের শৈশবের অভিনয় দর্শকদের মনে আজও তাজা। আর্থিকভাবে স্থিতিশীল ও সফল জীবনযাপনের জন্য তার যাত্রা অনেক তরুণ অভিনেতার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
Leave a comment