সম্প্রতি মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে, বিশেষ করে প্রবাসীদের লক্ষ্য করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যানেও ডাকাতির ঘটনা ঘটে চলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাইওয়ে পুলিশ ১,৪৪৩ জন ডাকাতের একটি তালিকা তৈরি করেছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে। পাশাপাশি, অতিরিক্ত ৭০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দরে নেমে প্রবাসীরা যেসব গাড়ি ভাড়া করে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, সেগুলোকে টার্গেট করে ডাকাতি করা হচ্ছে। বিশেষ করে, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও চাঁদপুর এলাকার ডাকাত দল তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এসব ডাকাতি সংঘটিত করছে।
একজন গাড়িচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর আব্দুল্লাহপুর, হাউজ বিল্ডিং, স্টেশন রোড এলাকায় ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটে। তবে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটে কুমিল্লা অঞ্চলে।
প্রবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হাইওয়ে পুলিশ বিমানবন্দরে ‘প্রবাসী হেল্প ডেস্ক’ চালু করছে। এই ডেস্ক থেকে প্রবাসীদের ভাড়া করা গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, চালকের লাইসেন্সের কপি ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হবে। একই সঙ্গে, একটি বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসীদের গাড়ি বিমানবন্দর থেকে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত নজরদারির মধ্যে রাখা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি ২০২৫-এ ডাকাতির মামলার সংখ্যা ছিল ৭১, ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪-এ। গত বছরের একই সময়ে ডাকাতির মামলা ছিল ৬২টি। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সম্প্রতি মালয়েশিয়াপ্রবাসী ও কুয়েতপ্রবাসীর গাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কুমিল্লার জেলা পুলিশ সুপার জানান, ডাকাতরা বিমানবন্দর থেকে প্রবাসীদের গাড়ির তথ্য সংগ্রহ করে এবং মেঘনা টোল প্লাজার পর থেকে তাদের অনুসরণ করে। নির্জন স্থানে পৌঁছালে পিকআপ দিয়ে গাড়ি আটকিয়ে ডাকাতি করা হয়।
শুধু প্রবাসীদের গাড়ি নয়, মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকেও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বেশ কয়েকটি চক্র রড, তৈরিপোশাক ও অন্যান্য মূল্যবান পণ্যবাহী ট্রাকে ডাকাতি করছে।
গত ৮ মার্চ নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে একদল ডাকাত ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একটি রডভর্তি ট্রাক ছিনতাই করে। পরে অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হাইওয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ডাকাতি দমনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং এরই মধ্যে অভিযান চালিয়ে কিছু ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যের বিরুদ্ধে সহযোগিতার অভিযোগও উঠেছে। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, যতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের ভাগ-বাঁটোয়ারার সম্পর্ক থাকবে, ততদিন মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধ হবে না। প্রযুক্তিগত নজরদারি বাড়াতে হবে।
হাইওয়ে পুলিশ পরামর্শ দিয়েছে, প্রবাসীরা যেন সরকারি নিবন্ধিত পরিবহন ব্যবহার করেন এবং পুলিশের হেল্প ডেস্কে তাদের গাড়ির তথ্য জমা রাখেন। সিসিটিভির আওতায় মহাসড়ক নিয়ে আসার বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।
ডাকাতির ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ নাগরিকদের সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
Leave a comment