ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মুক্তিপণ দিয়েও উদ্ধার করা হয়েছে ৫ বছরের শিশু আয়মান সাদাবের খণ্ডিত মরদেহ।
গফরগাঁও উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নের দিঘীরপাড় গ্রামে আয়মানের নানার বাড়ির পাশের একটি জঙ্গলের পুকুরপাড় থেকে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকালে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এর মাত্র দুদিন আগে গফরগাঁওয়ে একই এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া সিফাত হাসান নামে আরেক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
জানা গেছে, আয়মান সাদাব নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বারঘরিয়া গ্রামের প্রবাসী আল আমিনের ছেলে। গত শুক্রবার (১১ জুলাই) গফরগাঁওয়ে তার নানার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় সে ।
জন্ম থেকেই আয়মান তার মা সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে নানার বাড়িতে বসবাস করছিল। শুক্রবার দুপুরে বাড়ির কাছেই একটি মাইকের শব্দ শুনে আয়মান সেদিকে গিয়েছিল, এরপর থেকেই আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তার । আয়মানের পরিবার নিখোঁজ হওয়ার দিনই পাগলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে ।
পরিবারের সদস্যরা জানান, অপহরণকারীরা ফোন করে প্রথমে ২০ হাজার ও পরে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরিবারটি সন্তানের জীবন বাঁচাতে দুই দফায় মোট ২৮ হাজার টাকা পাঠায়, কিন্তু অপহরণকারীরা তাদের ফোন বন্ধ করে দেয়।
এরপরই পাওয়া যায় আয়মানের মরদেহ। অপরদিকে সিফাত নামে শিশুটির পরিবারের কাছ থেকেও চক্রটি মুক্তিপণের কিছু টাকা নিয়েছিল।
স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি শিশু অপহরণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গফরগাঁও এবং পার্শ্ববর্তী নান্দাইল উপজেলার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক। এলাকাবাসী শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতারের জোর দাবি জানিয়েছেন ।
সাদাবের মামা খলিল মিয়া বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে দেড়শ গজ দূরে এক প্রতিবেশীর পুকুরপাড়ে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঘাস কাটতে গিয়ে দুর্গন্ধ শুরু হলে খোঁজ করতে গিয়ে দেখতে পায় ভাগনের মরদেহ । পুকুরে পড়ে মরল না কেউ তাকে মেরে ফেলে রাখল বুঝতে পারছি না।
আয়মানের মা সুমাইয়া আক্তার বলেন, কী অন্যায় করেছিল আমার নিষ্পাপ ছেলে? অপহরণ করে টাকা নিয়েও চার দিন আটকে রেখে ওকে কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছে। আমাদের বুক খালি করেছে। আমি আমার ছেলের খুনিদের ফাঁসি চাই।
পাগলা থানার ওসি মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম জানান, আয়মানের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুটি ঘটনারই জোর তদন্ত চলছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এসব ক্ষেত্রে অপহরণকারীদের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে যায় প্রতারক চক্র। কোথাও কেউ নিখোঁজ হলে প্রতারকেরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। তারা দোকানের এজেন্ট নম্বর ও ভুয়া এনআইডি নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা সিম দিয়ে প্রতারণা করে। এ জন্য শিশুদের মা-বাবাকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।
Leave a comment