পুলিশ , ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই শিশু সন্তানসহ মাকে গলাকেটে হত্যা মামলার মূল আসামি মো. নজরুল ইসলামকে (২৫) গ্রেফতার করেছে।
জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে জেলা পুলিশের একটি দল গ্রেফতার করে তাকে ।
আসামি নজরুল ইসলাম নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সেনের বাজার এলাকার সলতু মিয়ার ছেলে। নিহত ময়না আক্তারের দেবর তিনি
গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ন কবীর।
তিনি বলেন, এর আগেও আসামি নজরুল ইসলাম জয়দেবপুর থানায় একটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে দুই বছর জেল খেটেছেন। এরপর তার বড় ভাই ও নিহত ময়না আক্তারের স্বামী রফিকুল ইসলাম একটি সমিতি থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ করে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনে গত দুই মাস আগে তাকে নিজের ভাড়া বাসায় রেখেছিল। এরপর গত ১৪ জুলাই ভোররাতে দুই শিশুসহ মাকে গলাকেটে হত্যা করে পালিয়ে যান।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমার ভাই একটি হত্যা মামলার আসামি। তাকে আড়াই মাস আগে ৪০ হাজার টাকা দেনা করে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছি। এরপর আমার সঙ্গেই থেকে অটোরিকশা চালাত সে ।
“এক রুমের বাসায় থাকতে কষ্ট হত, তাই দেড় মাস আগে পনাশাইল এলাকায় দুই রুমের ভাড়া বাসা নেই। এক রুমে আমি পরিবার নিয়ে আর অন্য রুমে নজরুল থাকত। মাঝেমধ্যে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ঝগড়া হত আমার স্ত্রীর সঙ্গে। আর কোনো সমস্যা ছিল না।”
তিনি বলেন, “রোববার রাত ৮টার সময় আমি ডিউটিতে চলে যাই। পরে সাড়ে ১০টার দিকে বাসায় কল দিলে ময়নার নম্বর বন্ধ পাই। তারপর নজরুলের নম্বরে কল দিয়ে কথা বলি ময়নার সঙ্গে ।
“সোমবার সকালে বাসায় এসে দরজা বন্ধ পাই এবং গেইট তালাবদ্ধ ছিল। পরে বাসার মালিককে নিয়ে তালা ভেঙে দেখি তাদের রক্তাক্ত মৃতদেহ। ভাইকেও (নজরুল) আর খুঁজে পাইনি। তার মোবাইলও বন্ধ। সে সবাইকে হত্যা করে পালিয়েছে।”
এমন করবে জানলে নজরুলকে জেল থেকে বের করতেন না বলে রফিকুল আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন।
ময়নার বোন আছমা আক্তার বলেন, “খবর শুনে এসে দেখি আমার বোন ও তার দুই সন্তানের লাশ পড়ে আছে খাটের ওপর । আমার বোন জামাই খুব ভালো মানুষ। ৯ থেকে ১০ বছর আগে বিয়ে হলেও তাদের কোনোদিন ঝগড়া হয়নি। নজরুল আমার বোন ও ভাগ্নে-ভাগনিকে মেরেছে।
বাসার মালিক হৃদয় হাসান হাইয়ুম বলেন, “দেড় মাস আগে বাসা ভাড়া নিয়েছেন রফিকুল। এক রুমে রফিকুল তার পরিবার নিয়ে এবং অন্য রুমে থাকত তার ভাই নজরুল । তবে তাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য দেখিনি। এমন ঘটনা কেন ঘটল তাও বলতে পারছি না।” ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভালুকা সার্কেল) মনতোষ সাহা বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ।
ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ন কবীর বলেন, এ ঘটনায় নিহত ময়না আক্তারের বড় ভাই মো. জহিরুল ইসলাম সোমবার রাতে বাদী হয়ে ভালুকা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে।
Leave a comment