কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা চীনের জন্য একটি কৌশলগত লাভের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী চীনের তৈরি অস্ত্র ও জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে সরাসরি ভারতের বিরুদ্ধে। এর ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে চীনা অস্ত্রের সক্ষমতা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে হাতে-কলমে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে বেইজিং—যা চীনের সামরিক নকশা ও পরবর্তী উন্নয়নকে আরও শক্তিশালী করছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আলেকজান্ডার নিল বলেন, “গোয়েন্দা দৃষ্টিকোণ থেকে এই সংঘাত চীনের জন্য এক অপূর্ব সুযোগ—যেখানে তাদের সম্ভাব্য প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জড়িত এবং তাও নিজেদের সীমান্ত ঘেঁষে।” এমন বাস্তবতায় চীনের আধুনিকীকরণপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনী এখন কেবল সীমান্তে নয়, ভারত মহাসাগর ও মহাকাশ থেকেও ভারতের প্রতিটি পদক্ষেপ নজরদারিতে রাখতে সক্ষম।
দুই মার্কিন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যবহৃত চীনের জে-১০ যুদ্ধবিমান অন্তত দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে একটি ফরাসি নির্মিত রাফাল। যদিও ভারত সরকার এখন পর্যন্ত তাদের কোনো বিমান হারানোর কথা স্বীকার করেনি, তবে পাকিস্তান সরকার তাদের চীনা বিমান ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করেছে।
আকাশযুদ্ধের মাধ্যমে একদিকে যেমন বৈমানিক ও অস্ত্রের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ সম্ভব হয়, অন্যদিকে এটি বাস্তব যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রযুক্তিগত পরীক্ষারও বিরল সুযোগ এনে দেয়—যা সব দেশের প্রতিরক্ষা উন্নয়নে অত্যন্ত মূল্যবান।
চীনের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ এবং ১৯৬২ সালের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের ইতিহাস নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এই সংঘাত। হিমালয়ের ৩৮০০ কিলোমিটার সীমান্তে দুই দেশের উত্তেজনা সর্বশেষ ২০২০ সালে তীব্র হয়েছিল, যা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কিছুটা প্রশমিত হলেও পুরোপুরি মিটেনি।
লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) জানায়, বর্তমানে চীনের সক্রিয় স্যাটেলাইট সংখ্যা ২৬৭টি, যার মধ্যে অন্তত ১৯৬টি সরাসরি সামরিক ও গোয়েন্দা কাজে ব্যবহৃত। এমন নজরদারি নেটওয়ার্ক ভারতসহ আঞ্চলিক প্রতিপক্ষদের তুলনায় চীনকে অনেক এগিয়ে রেখেছে।
রয়টার্সের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পাকিস্তানের সামরিক মিডিয়া উইং এবং ভারতের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউই তাৎক্ষণিক মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পাকিস্তান পূর্বে বলেছিল, চীনের সঙ্গে তাদের একটি “সর্বাত্মক কৌশলগত অংশীদারত্ব” রয়েছে।
চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের এই ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতাকে গুরুত্ব না দিয়ে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, “চীনের উচিত তার সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা, যার মধ্যে ভারতও রয়েছে।”
চলমান এই সংঘাত শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা বাড়াচ্ছে না, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য হিসাব-নিকাশেও নতুন মাত্রা যোগ করছে।
Leave a comment