পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার আবহে ভারত জানিয়ে দিল, তারা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে চায় না। তবে প্রয়োজন হলে পাল্টা জবাব দিতেও পিছপা হবে না। সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগছিকে এই বার্তাই দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত–ইরান ২০তম যৌথ কমিশনের বৈঠকের উদ্বোধনী ভাষণে এই মনোভাব তুলে ধরেন জয়শঙ্কর।
গতকাল বুধবার দিল্লি পৌঁছান আব্বাস আরাগছি। তাঁর নেতৃত্বে ইরানের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল যৌথ কমিশনের বৈঠকে অংশ নেয়। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, জ্বালানি, পররাষ্ট্রনীতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে এই বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সাম্প্রতিক ভারত–পাকিস্তান সংঘাত।
বৈঠকের শুরুতে জয়শঙ্কর বলেন, “আপনারা এমন একটি সময়ে ভারত সফরে এসেছেন, যখন আমাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উত্তপ্ত। ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরে যে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে, তার উপযুক্ত জবাব দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সীমান্ত পেরিয়ে যে জঙ্গি ঘাঁটি গড়ে তোলা হয়েছে, সেগুলো ধ্বংস করতেই আমাদের এই সাম্প্রতিক অভিযান।”
জয়শঙ্কর আরও বলেন, “আমরা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে আগ্রহী নই। কিন্তু আমাদের ওপর কেউ আঘাত হানলে, ভারত তার যোগ্য জবাব দেবে—এটাই আমাদের অবস্থান।”
তিনি আশ্বাস দেন, “ইরান আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক অংশীদার। এই মুহূর্তে চলমান পরিস্থিতির পূর্ণ চিত্র আপনাদের জানা জরুরি। আমরা চাই ইরান অবগত থাকুক ভারতীয় অবস্থান সম্পর্কে।”
বৈঠকে ইরান ও ভারতের মধ্যকার জ্বালানি সরবরাহ, বন্দর উন্নয়ন, বিশেষ করে চাবাহার বন্দর নিয়ে অগ্রগতি এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়েও আলোচনা হয়। তবে জয়শঙ্করের স্বাগত ভাষণে স্পষ্ট হয়, সাম্প্রতিক সামরিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারত তার প্রতিরক্ষা নীতিকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখতে চায়, এবং সেই বার্তাই সে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের জানাতে সচেষ্ট।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারত এই মুহূর্তে দ্বৈত কৌশল অবলম্বন করছে—একদিকে আঞ্চলিক মিত্রদের আশ্বস্ত করছে, অন্যদিকে পাকিস্তানের আক্রমণের বিপরীতে তার জবাবদিহির নৈতিকতা তুলে ধরছে। জয়শঙ্করের এই ভাষণ তেমনই এক কৌশলের অংশ।
Leave a comment