হারিয়ানা, ভারত – ভারতের হারিয়ানায় ধর্মীয় বিদ্বেষের এক নির্মম ঘটনায় প্রাণ হারালেন ফেরদৌস আলম নামের এক মুসলিম দর্জি। মাত্র ছয় মাস আগে বিবাহিত এই সহজসরল যুবক গত শনিবার সন্ধ্যায় বন্ধুর বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। পথে ঘটে যায় হৃদয়বিদারক ঘটনা—শুধুমাত্র মুসলিম চিহ্ন বহনকারী একটি টুপি পরার কারণে প্রাণ দিতে হলো তাকে।
ফেরার পথে স্থানীয় ‘শিশু লাল’ নামের এক ব্যক্তি হঠাৎ করে ফেরদৌসের মাথা থেকে টুপি ছুড়ে ফেলে দেয়। ফেরদৌস কোনো প্রতিবাদ না করে চুপচাপ তা কুড়িয়ে নিয়ে পুনরায় মাথায় পরেন। কিন্তু শিশু লাল আবারও টুপিটি খুলে ছুঁড়ে ফেলেন। ফেরদৌস যখন মাথা নিচু করে তা তুলতে যান, তখনই পেছন থেকে শিশুলাল তার মাথায় সজোরে লাথি মারেন।
আঘাত এতটাই গুরুতর ছিলো যে ফেরদৌস সঙ্গে সঙ্গেই অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আশপাশের পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দারা বলছেন, ফেরদৌস আলম ছিলেন শান্ত স্বভাবের মানুষ। নিরীহ এই দর্জি প্রতিদিন কাজে যেতেন এবং ফিরে আসতেন। কারো সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিল না তার। তার মৃত্যু স্থানীয় মুসলিমদের মধ্যে গভীর আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
এক প্রতিবেশী বলেন, “সে কখনো ঝগড়া করত না, কারো সঙ্গে রাগারাগিও করত না। তার অপরাধ ছিল সে মুসলিম, আর মাথায় টুপি পরেছিল।” তারা এটিকে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখছেন।
এই ঘটনার পর ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে এই ধরনের সহিংসতা ভারতের বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি চরম আঘাত। অন্যদিকে কিছু মানবাধিকার সংগঠন সরকারের নীরব ভূমিকার সমালোচনা করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে।
অবশ্য, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিশুলালের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড। স্থানীয় মুসলিম সমাজের দাবি, শুধু প্রতিবাদ নয়, সরকারের কাছ থেকে দ্রুত বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তারও দরকার রয়েছে।
ফেরদৌস আলমের মতো একজন নিরীহ মানুষের মৃত্যু আবারও স্মরণ করিয়ে দিল—মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে এখনও কতটা পেছনে পড়ে আছে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত এই উপমহাদেশ।
Leave a comment