মাত্র দুই দিনে ভারতের পাঠানো ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ বলছে, ইসরায়েলে তৈরি এসব ‘হারপ’ ড্রোন বেসামরিক জনগণ ও সামরিক স্থাপনায় হামলার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল। শুক্রবার পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এক বিবৃতিতে জানান, বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৯টি এবং এরপর বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোরের মধ্যে আরও ৪৮টি ড্রোন গুলি করে নামানো হয়।
ড্রোন হামলার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারতীয় বাহিনীর গোলাবর্ষণে অন্তত পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। গোলাবর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটেছে হাজিরা, ফরোয়ার্ড কাহুটা ও খুরাত্তা এলাকায়। এতে বহু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এলওসিতে ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের দ্রুত এবং কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের অধিকাংশ ছিলেন পর্যটক। ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর দিকে আঙুল তোলে, যদিও ইসলামাবাদ এ অভিযোগ ‘মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে প্রত্যাখ্যান করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দিবাগত রাতেই পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। ভারতের দাবি, তারা কেবল ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, কোনো সামরিক স্থাপনায় নয়। তবে পাকিস্তান জানিয়েছে, এসব হামলায় ৩১ জন নিহত ও অন্তত ৭১ জন আহত হয়েছেন। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল মসজিদ ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, যার মধ্যে রয়েছে নীলম-ঝিলম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে, যার মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল। যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তান সম্ভবত দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার একটি রাফাল।
বৃহস্পতিবার ভোররাতেও দুই দেশের মধ্যে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। পাশাপাশি এলওসিতে গোলাগুলির লড়াই অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় ফের বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, যে ড্রোনগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো ইসরায়েলের হারপ সিরিজের। এই ড্রোনগুলো একবার আকাশে ওড়ানোর পর নিজে থেকেই নির্দিষ্ট এলাকায় ঘুরতে থাকে, লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করে এবং প্রয়োজনে আত্মঘাতী হামলা চালায়—যাতে ড্রোনটি নিজেকেও ধ্বংস করে দেয়।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভারত সরকার পাকিস্তানের এসব দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে সীমান্তে সামরিক তৎপরতা আরও জোরদার করা হয়েছে বলে দিল্লিভিত্তিক একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
Leave a comment