বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপড়েন, কূটনৈতিক শীতলতা এবং একপক্ষীয় বয়কটের আহ্বানের পরও থেমে নেই দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক কার্যক্রম। বরং, ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ বেড়েই চলেছে বলে জানিয়েছে বণিক বার্তা ও আজকের বিভিন্ন জাতীয় পত্রপত্রিকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রায় ১১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। এই পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে তৈরি পণ্যের ওপর বাংলাদেশের বাজারে নির্ভরতা ও চাহিদা এখনো প্রবল।
ভারতের প্রধান রফতানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে তুলা, খাদ্যশস্য, খনিজ ও জ্বালানি তেল। বিপরীতে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে মূলত তৈরি পোশাক, হালকা প্রকৌশল পণ্য ও চামড়াজাত সামগ্রী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও পারস্পরিক বয়কটের ডাক থাকলেও অর্থনৈতিক সম্পর্কের বাস্তবতা অনেক গভীরে প্রোথিত। দুই দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগ এবং দ্রুত ও সহজ পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাই এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখার মূল চালিকা শক্তি।
ঢাকার একাধিক অর্থনীতিবিদ ও বাণিজ্য বিশ্লেষক মনে করছেন, বর্তমান সময়ে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করা বা দুর্বল করা উভয় দেশের জন্যই আত্মঘাতী হবে। ভারত যেমন বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাজার, তেমনি বাংলাদেশও ভারতের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য আমদানিকারক।
এছাড়া ব্যবসায়ীদের মতে, হঠাৎ করে ভারতীয় পণ্যের আমদানি বন্ধ করলে বাজারে পণ্যের ঘাটতি, মূল্যস্ফীতি এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু রাজনৈতিক মহল ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিচ্ছে, বাস্তব বাজার পরিস্থিতি বলছে ভিন্ন কথা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, কিছু কিছু খাতে আমদানির পরিমাণ সামান্য কমলেও সামগ্রিকভাবে ভারতীয় পণ্যের প্রবাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে দুই দেশের মধ্যকার আস্থার সংকটও কেটে যাবে এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
বিশ্বায়নের যুগে এককভাবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার চিন্তা শুধু রাজনৈতিক বার্তা দেয়, বাস্তবতার সঙ্গে যার সামঞ্জস্য কম। বাংলাদেশের বাজার কাঠামো, আমদানি নির্ভরতা ও ভোক্তা আচরণ বলছে, ভারতীয় পণ্যের জায়গা নিতে এখনো অন্য কোনো দেশের প্রস্তুতি বা সক্ষমতা নেই।
অতএব, রাজনৈতিক টানাপড়েন থাকলেও বাণিজ্যে ছন্দপতন ঘটছে না। বরং পরিসংখ্যান বলছে, দুই দেশের অর্থনীতি এখনো পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল, যা একদিকে আঞ্চলিক স্থিতি রক্ষায়, অন্যদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
Leave a comment