আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক মাজার-ই-শরীফের নীল মসজিদ ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ‘হযরত আলীর মাজার’ নামে পরিচিত এই স্থাপনাটি দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক নিদর্শন।
সোমবার (৩ নভেম্বর) রাত প্রায় ১টার দিকে ৬.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে উত্তর আফগানিস্তান। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এতে অন্তত ১০ জন নিহত ও দেড় শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভূমিকম্পের তীব্রতায় নীল মসজিদের মূল ভবনের দেয়ালে ফাটল ধরেছে এবং কিছু অলংকরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কাঠামোর বড় ধরনের ধসের আশঙ্কা আপাতত নেই। এই মসজিদটি আফগানিস্তানের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনা, যা শতাব্দী ধরে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
‘মাজার-ই-শরীফ’ অর্থাৎ “সম্মানিত ব্যক্তির সমাধি”—এই স্থানটি বহুদিন ধরে ইসলামী ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, এখানে খলিফা হযরত আলী (রাঃ)-এর কবর রয়েছে। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, হযরত আলী (রাঃ) ইরাকের কুফায় শহীদ হন এবং নাজাফে কবরস্থ করা হয়।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য তাঁর মরদেহ গোপনে খোরাসানে (বর্তমান আফগানিস্তান) নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং বর্তমান মাজার-ই-শরীফে সমাহিত করা হয়। যদিও এর পক্ষে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এখন উদ্ধার তৎপরতা চলছে। আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এক মেয়ে শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হচ্ছে। শিশুটি মারাত্মক আহত হলেও জীবিত রয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের বড় অংশের বসবাস ছিল মাটির ঘরে—যেগুলোর অধিকাংশই ধসে পড়েছে। মাজার-ই-শরীফের রাহিমা নামে এক নারী সিএনএনকে বলেন,“ভূমিকম্প আঘাত হানার পর আমার পরিবার ঘুম থেকে চিৎকার করে উঠে পড়ে। আমার জীবনে এমন তীব্র কম্পন আগে কখনও অনুভব করিনি। আমাদের কংক্রিটের বাড়ি টিকে গেছে, কিন্তু আশেপাশের অনেক কাঁচা বাড়ির অবস্থা জানি না।”
দেশটির অন্তবর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্ধার অভিযানে যোগদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভূমিকম্পে ঐতিহাসিক ‘নীল মসজিদ’-এর ক্ষতি দেশটির ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য এক বড় ধাক্কা বলে অভিহিত করেছেন স্থানীয় ধর্মীয় নেতা ও ইতিহাসবিদরা।
আফগানিস্তানে ঘন ঘন ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও ঐতিহাসিক স্থাপনার ক্ষতি দেশটির মানবিক সংকটকে আরও গভীর করছে। এই সর্বশেষ ভূমিকম্পে ‘হযরত আলীর মাজার’ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে—যা আফগান জনগণের ইতিহাস ও বিশ্বাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
Leave a comment