আজ, ৫ মে, বাঙালি জাতির গর্ব প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জন্মদিন। ১৯১১ সালের এই দিনে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই সাহসিনী, যিনি অল্প বয়সেই ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে নিজের নাম অমর করে যান আত্মাহুতির মাধ্যমে।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী প্রথম বাঙালি নারী যাঁর আত্মত্যাগ নতুন করে প্রেরণা জুগিয়েছিল জাতিকে। তিনি চট্টগ্রামের পল্লী অঞ্চলে বেড়ে উঠলেও ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী ও চেতনায় বিপ্লবী ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন, কিন্তু মনের ভেতর জ্বলতে থাকা দেশমাতৃকার মুক্তির আগুন তাঁকে নামিয়ে আনে আন্দোলনের ময়দানে।
১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবীদের সংগে মিলে তিনি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। এই ক্লাবটিতে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো ছিল, যাতে লেখা ছিল “Dogs and Indians not allowed” — যা ছিল ঔপনিবেশিক বর্ণবাদ ও বৈষম্যের প্রতীক। আক্রমণ শেষে ধরা পড়ার আগেই তিনি সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন, কারণ তিনি চেয়েছিলেন না ধরা পড়তে, না বিপ্লবের তথ্য ফাঁস করতে।
মাত্র ২১ বছর বয়সেই প্রীতিলতা হয়ে উঠেছিলেন নারীর সাহস, আত্মত্যাগ এবং দেশের প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসার এক জীবন্ত প্রতীক। তাঁর আত্মবলিদান উপমহাদেশের নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণের পথকে প্রসারিত করে। আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে জাতি, যাঁর জীবনকথা আজও তরুণদের অনুপ্রেরণা জোগায় দেশের জন্য লড়তে, সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার শুধুমাত্র একজন বিপ্লবী নন, বরং বাঙালি নারীর আত্মমর্যাদা ও প্রতিবাদের এক দীপ্ত প্রতিমূর্তি। তাঁর জন্মদিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে সেই সাহসিনীকে, যিনি জাতির মুক্তির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
Leave a comment