ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েস। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ঘোষিত রায়ে বলা হয়, ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষমতায় থাকার জন্য অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন তিনি। এ রায় চূড়ান্ত; তার আর কোনো আপিলের সুযোগ নেই।
৭০ বছর বয়সী বোলসোনারোকে ব্রাসিলিয়ার ফেডারেল পুলিশ কারাগারে রাখা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকায় গৃহবন্দি অবস্থা থেকে গত শনিবার তাকে কারাগারে নেওয়া হয়। রোববারের শুনানিতে আদালতে উপস্থাপিত দলিলে দেখা যায়—তিনি তার গোড়ালিতে লাগানো মনিটর একটি “শোল্ডারিং আয়রন” দিয়ে খোলার চেষ্টা করেছিলেন।
তবে বোলসোনারো দাবি করেছেন, ওষুধের প্রভাবে তিনি শুধু ডিভাইসটি নষ্ট করতে চেয়েছিলেন; পালানোর কোনো পরিকল্পনা তার ছিল না। বোলসোনারোর স্বাস্থ্য অবনতি ঘটছে বলে জানায় তার চিকিৎসক দল। এ অবস্থায় বিচারপতি মোরায়েস নির্দেশ দেন, তাকে পূর্ণ চিকিৎসা সুবিধা দিতে হবে।
গেল সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট তাকে অভ্যুত্থান পরিকল্পনার দায়ে অভিযুক্ত ঘোষণা করে। বিচারপতিরা বলেন, তিনি নির্বাচনে জয়ী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জেরাদো আলকমিন এবং বিচারপতি মোরায়েসকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়েও জানতেন। এই মামলারও বিচার তদারকি করেছেন বিচারপতি মোরায়েস।
ঘটনার সময় সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা বোলসোনারোর অভ্যুত্থান পরিকল্পনায় সাড়া দেননি। ফলে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি নির্বিঘ্নে শপথ নেন লুলা দা সিলভা। তবে এর এক সপ্তাহ পর হাজারো বোলসোনারোর সমর্থক ব্রাসিলিয়ার সরকারি ভবন দখলে নেয়। নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং প্রায় দেড় হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত মনে করে—দাঙ্গাকারীদের উসকে দিয়েছিলেন বোলসোনারো নিজেই।
রায়ের মাধ্যমে বোলসোনারোকে শুধু দীর্ঘ কারাদণ্ডই দেওয়া হয়নি; সাজা শেষ হওয়ার আট বছর পর পর্যন্ত তিনি কোনো সরকারি পদে প্রার্থী হতে পারেননি। এতে তিনি ২০৬০ সাল পর্যন্ত কার্যত রাজনীতি থেকে দূরে থাকবেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, তাকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করে ২০২৬ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঠেকাতেই এই বিচার করা হয়েছে। তিনি রায়কে “উইচ হান্ট” বলে অভিহিত করেছেন।
বিচারপতি মোরায়েস জানান, বোলসোনারোর সঙ্গে ষড়যন্ত্রে জড়িত ও দোষী সাব্যস্ত অন্য ব্যক্তিদেরও দণ্ড ভোগ করতে হবে। তাদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক নিরাপত্তামন্ত্রী অগুস্তো হেলেনো, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল পাওলো সেরজিও নোগুয়েইরা দে অলিভেইরা। এই রায়ের পর ব্রাজিলের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে।
Leave a comment