পাকিস্তানে মৌসুমি বৃষ্টির দাপট বাড়তেই চলছে। গত জুনের শেষ দিক থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ এখন এক মহাদুর্যোগে রূপ নিয়েছে। সর্বশেষ সরকারি তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশজুড়ে ৫৪ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা (এনডিএমএ)। এর ফলে বর্ষা শুরুর পর মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮০ জনে। সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থা পাঞ্জাব প্রদেশে, যেখানে ভারী বৃষ্টিতে শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, বহু ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে, বন্ধ হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এক্সপ্রেসওয়ে এবং বাতিল বা বিলম্বিত হয়েছে অসংখ্য ফ্লাইট।
রাজধানী ইসলামাবাদের পাশের শহর রাওয়ালপিন্ডি তলিয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে। নালা লাই নদী বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। নিচু এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, পানির মধ্যে কুকুরসহ একজন ব্যক্তি হাঁটুসমান জলে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন—এক বেদনাবিধুর বাস্তবতা।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ এক্স (পূর্বতন টুইটার) প্ল্যাটফর্মে জানিয়েছেন, সরকারি সব সংস্থা সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাচ্ছে। জনগণকে যথাযথ সতর্কতা ও নির্দেশিকা অনুসরণ করে নিজ নিজ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছেন তিনি।
এনডিএমএর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, নদীর পাশবর্তী এলাকায় ইতোমধ্যে মানুষদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত রয়েছে। সংস্থাটি আরও সতর্ক করে বলেছে, তিন থেকে পাঁচ দিনের জন্য খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও জরুরি উপকরণ মজুত রাখতে হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ভারী বর্ষণ আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীও সম্ভাব্য উদ্ধার কাজে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন আতঙ্ক, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ভর করেছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী দলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় তা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না সব জায়গায়।
এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষার আগেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় এমন দুর্যোগের ক্ষতি বহুগুণ বেড়ে যায়। পাকিস্তানের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য এখন টেকসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আর বিলাসিতা নয়, বরং একান্ত প্রয়োজন।
সূত্র: এএফপি
Leave a comment