১৮১৮ সালের ৫ মে জার্মানির ট্রিয়ার শহরে জন্মগ্রহণ করেন কার্ল হাইনরিখ মার্কস, যিনি পরবর্তীকালে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের একজন হয়ে ওঠেন। সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতির জগতে তার প্রভাব আজও গভীরভাবে বিদ্যমান। শ্রেণি সংগ্রাম, পুঁজিবাদী শোষণ ও বিপ্লবী সমাজ পরিবর্তনের ধারণা দিয়ে তিনি যে ‘মার্কসবাদ’ প্রবর্তন করেন, তা শুধু একাডেমিক জগতে নয়, বাস্তব রাজনৈতিক আন্দোলনের চেতনাশক্তি হিসেবেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
কার্ল মার্কসের পিতা ছিলেন একজন আইনজীবী এবং ইহুদি পরিবারে জন্ম নিলেও পরে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হন। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন বন ও বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে তিনি দর্শন, ইতিহাস ও আইন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তরুণ বয়স থেকেই মার্কস যুক্ত হন র্যাডিকাল রাজনৈতিক মতবাদ ও হেগেলীয় দর্শনের সঙ্গে। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি হেগেলের ভাববাদ থেকে সরে এসে বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন।
তার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব হলো বন্ধু ও সহচর ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা “দ্য কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো” (১৮৪৮), যা একটি রাজনৈতিক ঘরানার ইতিহাসে মাইলফলক। এর শুরুতেই লেখা বিখ্যাত লাইন—“A spectre is haunting Europe — the spectre of communism”—বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের মাঝে এক সময় বিপ্লবের ডাক হয়ে উঠেছিল।
মার্কসের সবচেয়ে বিশ্লেষণাত্মক এবং তাত্ত্বিক কাজ হলো তিন খণ্ডে প্রকাশিত অর্থনীতিভিত্তিক গবেষণা “Das Kapital” (দাস ক্যাপিটাল)। এতে তিনি পুঁজিবাদের কাঠামো, মূলধনের স্বভাব, শ্রমশক্তির শোষণ ও শ্রেণি দ্বন্দ্ব নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। তার মতে, সমাজের ইতিহাস মূলত শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস, যেখানে এক শ্রেণি অন্য শ্রেণিকে উৎপাদনের উপকরণ থেকে বঞ্চিত করে শাসন করে এসেছে।
তার চিন্তা শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব, চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব, কিউবার বিপ্লবসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে কমিউনিজম ও সমাজতন্ত্রের অভ্যুত্থানের পেছনে মার্কসবাদ ছিল এক অনুপ্রেরণার উৎস। তবে সমালোচকরাও কম ছিলেন না। অনেকে তার মতবাদকে কর্তৃত্ববাদী শাসনের হাতিয়ার বলেও অভিহিত করেছেন।
কার্ল মার্কস ১৮৮৩ সালের ১৪ মার্চ লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। হাইগেট কবরস্থানে আজও তার সমাধিফলকে উৎকীর্ণ রয়েছে সেই বহুল উদ্ধৃত বাণী—
“The philosophers have only interpreted the world, in various ways; the point, however, is to change it.”
কার্ল মার্কসের জন্মদিনে আজ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক ও বামপন্থী সংগঠন তার স্মরণে নানা আয়োজনে অংশ নিচ্ছে। একইসঙ্গে পুঁজিবাদ, বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে তার দর্শন নতুন আলোচনার জন্ম দিচ্ছে এই আধুনিক সময়েও।
Leave a comment