ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ব্যাপক ব্যবধানে জয় পেয়েছেন শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ঘোষিত এই ফলাফলকে অনেকেই ডাকসু রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরির ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। তার ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট। এটি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (ছাত্রদল)-এর প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান-এর প্রাপ্ত ভোটের প্রায় তিন গুণ। আবিদুল পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে শামীম হোসেন পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৮৪ ভোট, আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট।
ডাকসুর ইতিহাসে খুব কমবারই ভিপি পদে এত বড় ব্যবধানে কেউ জয় পেয়েছেন। এবারের নির্বাচনে সাদিক কায়েমের বিজয়কে ছাত্র রাজনীতিতে সংগঠিত জোটের শক্তির প্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জয় ঘোষণার পরপরই তার সমর্থকদের উল্লাস স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ও বিভিন্ন হল।
ভোটারদের মধ্যে অনেকেই ফলাফলকে “অপ্রত্যাশিত হলেও সংগঠিত প্রস্তুতির প্রতিফলন” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের এই জোরালো বিজয় আগামী দিনে ডাকসু এবং বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
তবে প্রতিদ্বন্দ্বীরা অভিযোগ করেছেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রভাব ও সংগঠিত প্রচারের ফলে নির্বাচনী লড়াই একপেশে হয়ে গেছে। স্বাধীন প্রার্থী উমামা ফাতেমা মন্তব্য করেন, “শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃত স্বাধীন প্রার্থীদের জন্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ এখনো কঠিন।”
বিজয়ী প্রার্থীর প্রতিশ্রুতি-
বিজয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আবু সাদিক কায়েম বলেন,
“এই জয় কেবল একটি দলের নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ডাকসুকে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও কল্যাণের আসল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত করব।”
তিনি ছাত্রাবাস সংকট নিরসন, একাডেমিক সুবিধা বৃদ্ধি, গ্রন্থাগার উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
বৃহত্তর প্রেক্ষাপট-
ডাকসু নির্বাচন সব সময়ই জাতীয় রাজনীতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। শিবির-সমর্থিত প্রার্থীর এমন বিপুল বিজয়কে অনেকেই জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বার্তা হিসেবে দেখছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ফলাফল থেকে বোঝা যায়, তরুণ ভোটারদের মধ্যে বিকল্প নেতৃত্বের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, যা দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্যেও প্রভাব ফেলতে পারে।
সামনে কী অপেক্ষা করছে?
ভিপি পদে সাদিক কায়েমের জয় ডাকসুর ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের দিক নির্দেশনা দেবে। তার নেতৃত্বে ডাকসু কতটা শিক্ষার্থীদের মৌলিক দাবি পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে—এখন সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
ক্যাম্পাস রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই ফলাফল হয়তো দীর্ঘদিন স্থবির থাকা ডাকসুকে পুনরায় সক্রিয় করতে সহায়তা করবে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির ভারসাম্যে যে পরিবর্তন শুরু হয়েছে, তা জাতীয় রাজনীতিতেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে।
Leave a comment