ভারতের আহমেদাবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজ থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাস কুমার রমেশ। ২৪২ আরোহীর মধ্যে তিনিই একমাত্র জীবিত ব্যক্তি। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ভয়াবহ সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
জ্বালানিভর্তি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। উড্ডয়নের এক মিনিটের মাথায় এটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছে একটি হাসপাতালের হোস্টেল ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়।
ঘটনার সময় ১১এ নম্বর আসনে বসা রমেশ জানান, উড়োজাহাজটি আচমকা কাঁপতে শুরু করে। কিছু আটকে গেছে মনে হওয়ামাত্রই সাদা ও সবুজ আলো জ্বলে ওঠে। একপর্যায়ে তীব্র গতিতে একটি ভবনের দিকে ধেয়ে গিয়ে সেটিতে আছড়ে পড়ে। চোখের সামনে আগুনের গোলার মতো বিস্ফোরণ ঘটে।
রমেশ বলেন, ‘শুরুতে মনে হয়েছিল, আমি মরে যাচ্ছি। কিন্তু পরে যখন জ্ঞান ফিরল, বুঝলাম আমি এখনো বেঁচে আছি। সিটবেল্ট খুলে দেখলাম, পাশের দরজাটা ভেঙে পড়েছে এবং সেখান দিয়ে বাইরে যাওয়ার মতো খানিকটা খালি জায়গা আছে।’ তিনি সেই ফাঁকা পথ ধরে বেরিয়ে আসেন এবং নিজেই অ্যাম্বুলেন্সের দিকে এগিয়ে যান।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রমেশ জানিয়েছেন, তাঁর বাঁ হাত আগুনে আংশিক পুড়ে গেছে এবং শরীরে আরও আঘাত আছে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসকরা তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা দিচ্ছেন বলে জানান।
ঘটনার পর শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হাসপাতালে গিয়ে রমেশকে দেখতে যান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, রক্তমাখা টি-শার্ট পরা রমেশ পা টেনে টেনে হেঁটে অ্যাম্বুলেন্সে উঠছেন।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, উড়োজাহাজে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ ও ১ জন কানাডীয় নাগরিক ছাড়াও ১২ জন ক্রু ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২৬৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে উড়োজাহাজের আরোহী ছাড়াও দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের ভবনে থাকা লোকজন রয়েছেন। মৃতদের শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিমানে থাকা রমেশের ভাইও প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যে থাকা তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের পক্ষ থেকে বিশ্বাসের বেঁচে ফেরাকে ‘আল্লাহর কৃপা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিমান দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত শুরু করেছে ভারতীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
Leave a comment